আজহারুল হক, ময়মনসিংহ : [২] একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রাণ প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত সুস্থ করে তোলার শেষ চেষ্টাটুকু করে যান চিকিৎসকরা। তাইতো জীবন রক্ষার জন্য প্রতিটি মানুষেই ছুটে যান হাসপাতালে। জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল ও চিকিৎসকরাই যেখানে শেষ ভরসা সেখানে দুই কোটি মানুষের চিকিৎসাকেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বলতে গেলে অনেকটাই করোনা আক্রান্ত।
[৩] হাসপাতালে এক নারীতেই করোনা পভেটিভ ধরা পড়েছে ২৭ চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স ও ৩২ জন স্টাফসহ ৭২ জন। যে নারীর মাধ্যমে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন ওই নারী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। করোনা আক্রান্ত ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েই এক এক করে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা।
[৪] হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ১৬ এপ্রিল শেরপুর থেকে আসা এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ভর্তি হন। ১৭ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারীর একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন।
পরে ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৮ এপ্রিল তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। গত ১৯ এপ্রিল তার নমুনা হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। পরদিন ২০ এপ্রিল ওই নারী করোনা পজেটিভ বলে জানা যায়।
[৫] এর পর থেকেই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট স্টাফদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসক স্বল্পতায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে ১০০০ বেডের এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।
[৬] হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, শেরপুরের নকলা উপজেলার অন্তঃসত্ত¡া এক নারীর করোনা শনাক্ত হয়। ওই নারীর কারণে আক্রান্ত হয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত ২৭ চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স ও ৩২ জন স্টাফ। প্রতিদিনেই হাসপাতালে কর্মরতদের নমুনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
[৭] তিনি জানান, এছড়াও গাজীপুরের মাওনা থেকে আসা অপর এক নারী গার্মেন্টস কর্মীর মাধ্যমেও চিকিৎসকসহ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
[৮] এদিকে হাসপাতালে আক্রান্ত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চিকিৎসক ও আক্রান্তরা। তাঁরা করোনা আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালের কেবিনগুলো বরাদ্দ চেয়ে পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় চিকিৎসকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
[৯] এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানিয়েছেন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের জন্য নগরীর তিনটি আবাসিক হোটেল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রাখা হয়েছে। সেখানে করোনায় আক্রান্তরা কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এখন হাসপাতালে তাদের জন্য কেবিনগুলো বরাদ্দ দেয়া হলে অন্যান্য রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সবার মাঝেই একটা করোনা আতঙ্ক থাকবে।
[১০] এছাড়াও তিনি জানান, চিকিৎসকদের জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :