শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:৪৪ সকাল
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিলেন প্রয়াত সাংবাদিক খোকনের ছেলে আবীর

আশরাফুল আবীর, ফেসবুক থেকে : আমি ও আমার পরিবারের কাছে মনে হচ্ছে যে, আমরা হয়তো কোনো বাজে স্বপ্ন দেখলাম । কিন্তু এইটা যে আসলেই বাস্তবেই হয়ে গেলো, আমরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে, যেন একটা বাজে স্বপ্ন দেখে হয়তো ঘুমটা ভাঙলো।

আমার বাবা একজন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী একজন ব্যক্তি ছিলেন। যিনি সারাটি জীবনে হয়তো নিজের কথা কখনো ভাবেননি। আমাদের জন্যই হয়তো সারাটা জীবন উৎসর্গ করে গেলেন। এই করোনা সংকটময় দিনেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটা দিন অফিসে গিয়েছেন, বাসায় এসেছেন। আমি এই নিয়ে আমার বন্ধুদেরও বলেছিলাম যে, আমরা খুব ভয়ে আছি। কারণ আমার আব্বু আর আপু চাকুরীজীবী। তারা প্রতিদিনই অফিসের গাড়ি দিয়েই আসা যাওয়া করেছেন।

আমার বাবার ৩-৪ দিন ধরে কাশি হচ্ছিলো, পরিমাণটা দিন দিন বেড়েই চলছিল। আমার তখনই সন্দেহ হচ্ছিলো। আমি বাবাকে বললাম, আপনার করোনা হয়নি তো? তিনি হেসে বললেন, আরে ধুর বেটা! টনসিলের ব্যথা এইটা আগের থেকেই ছিল। ঐরকম কিছু না। কারণ তিনি চাচ্ছিলেন, বাসায় থেকেই ট্রিটমেন্ট নিয়ে সুস্থ হতে। কারণ করোনা পজেটিভ হলে এলাকার ভিতর আতঙ্ক ছড়াবে। এছাড়া লজ্জার ভয়ে তিনি তখন এটা সাধারণভাবেই দেখছিলেন। আমিও ভাবলাম যে, এইরকম জ্বর কাশি হয়তো সাধারণ। হয়তো বাসায় ওষুধ খেলে গরম পানি খেলে ঠিক হয়ে যাবে।

আমি এই কয়দিন বাসায় সাধারণভাবেই কাটাচ্ছিলাম। বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করার জন্য অনেক কিছু শিখছিলাম । কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিলো। আম্মুও জ্বর অনুভব করতে শুরু করলো তার দুই দিন আগে। তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মুকে বললাম। আম্মু বললো যে করোনার নমুনা দুই একদিনের ভিতরেই নিতে আসবে।

কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিলো। কাশির সাথে সাথে ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রমণ করছিলো মনে হচ্ছে। হয়তো বাবার গলায় চুলকাচ্ছিলো। আমি এর পরের দিন একটু দেরিতে উঠলাম। দেখলাম আম্মু বাবাকে ভাতের জাউ রান্না করে খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম, তিনি জানি কেমন করছেন। মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মনে হলো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। তিনি ওই মুহূর্তে এই লড়াইয়ের সাথে পেরে উঠতে পারেনি। আম্মুকে বললাম। আম্মু বললো, সকালে অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়েছে। উত্তরার রিজেন্ট এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স আসতেছে।

আম্মু বললো, তোর কাছে কি ভাংতি টাকা আছে? আমাকে দে তো । আমার কাছে ৩৫০০ টাকা ছিল, পুরাটাই আম্মুকে দিয়ে দিলাম সাথে সাথে ।ঘরে পরার জামা পরেই অ্যাম্বুলেন্সে উঠে গেলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো এমনিতেই দেরি হয় গেছে। আমি ভাবলাম, হাসপাতালে হয়তো অনেকেই থাকবে আব্বুর অফিসের লোক। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি আর আম্মু ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। কারণ লকডাউন থাকার জন্য গাড়ি তেমন চলে না রাস্তায়। এছাড়া অনেকেই হয়তো লক্ষণগুলোর বর্ণনা শুনে আসতে সাহস করছিলো না। এইদিক শাবান আঙ্কেল সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো ওইখানে।

তারা সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছিলো আইসিইউতে রেখে অক্সিজেন দেওয়ার। কিন্তু ডাক্তার বললো তার পালস নেই এবং ব্রেনও অক্সিজেন নিচ্ছে না। ডাইরেক্টলি বললেনও না যে, তিনি আগেই মারা গেছেন।

বললো, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। দোয়া করেন যদি ব্রেইন হঠাৎ মিরাকেলি কাজ করতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে আম্মুকে উপরে ডাকলো শেষ বারের মতো দেখার জন্য। তখন আম্মু ফোনে কয়েকজনকে জানিয়ে দেয়।

এছাড়া নিউজ স্ক্রলগুলোতেও অফিসিয়ালি আপডেট দিয়ে দেয় যে, বাবা আর নেই। এখন বাবার করোনা টেস্ট হওয়ার আগেই মারা গেছেন তাই সেটা অফিসিয়ালি বলা হয়নি। বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করেন। ওনার মতো ভালো, সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ খুব কমই আছে সমাজে। এছাড়া আমি চাই না এখন সবাই আমাদেরকে ডিমোটিভেট বা ভয়ভীতি দেখাক। আমরা এমনিতেই অনেক কঠিন সময় পার করছি।
আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করেই বাসায় আছি । বাসা বা এলাকা হয়তো লকডাউন হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে মনে করি, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করুক।

আমার বন্ধুরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য, আমাদের সামনের দিনগুলো নিয়ে। আশা করি আমাদের পরিবার , আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ , ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি , বাংলাদেশ সরকার পাশে থাকবেন । বাস্তবতা কঠিন হয়ে গেছে তবুও বাস্তবতার সাথেই সব কিছু এখন এডজাস্ট করে নিতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সচেতন হবেন। আপাতত আর কিছু লিখতে চাচ্ছি না । সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়