শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:২২ সকাল
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনার দহনকাল

নাসির উদ্দিন : অসহায় দহনকালে প্রবেশ করেছি একমাস হলো। বড় মেয়ে আটকা পড়েছে বোস্টন আমেরিকায়। এখন সেমিস্টার বিরতি। ক্লাস শুরু হবে আগস্টে। ছুটিতে দেশে আসার কথা। কিন্তু কোভিড-১৯ তাকে আসতে দেয়নি। আদরের সন্তান বিভুঁইয়ে নিঃসঙ্গ। এ নিয়ে সন্তান এবং পরিবারের অসহায়ত্ব প্রকাশের ভাষা ফুরিয়ে গেছে আগেই। মেয়ে প্রতিদিনই তার পরিচিতদের অনেকের আত্মীয়দের মৃত্যুর সংবাদ শেয়ার করে। ধানমন্ডি এবং আশপাশের কোন এলাকায় কে আক্রান্ত হয়েছে তাও জানায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রায়ই বিনিদ্র রাত কাটে মায়ের। বিশ্বাসের পাটাতনে প্রতিনিয়তই অর্চনা চলে। হয়তো মানতও। এ নিয়ে আমরা এখন বিতর্ক করি না।
বিজ্ঞানে বিশ্বাসী হিসেবে আমার আস্থা পরিবর্তনে, আবিষ্কারে। মানবজাতি অবশ্যই আবারও বিপর্যয় মোকাবেলা করে বিজয়ী হবে। মেয়ে অবশ্য তার বিচলিত মনোভাব প্রকাশ করেনি কখনো। বরং ফেসবুকে করোনাভাইরাস এওয়ারনেস নামে একটি একাউন্ট ওপেন করে নিকটজনদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় সন্তানের ও লেবেল শুরু হওয়ার কথা মে মাসে। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র কদিন আগে জানিয়েছে, এবারের পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলাফলের সিদ্ধান্ত নেবে নিজ নিজ স্কুল। স্কুল স্থানীয়ভাবে কীভাবে রেজাল্ট দেবে? পরীক্ষা নেবে, না পূর্ববর্তী ফলাফলের উপর রেজাল্ট নির্ধারণ হবে? সিদ্ধান্ত জানায়নি। যেহেতু ফাইনাল পরীক্ষা সেহেতু এ নিয়ে দ্বিতীয়জনের অস্থিরতা চরমে। পড়াশোনা এবং প্রস্তুতি কী চালিয়ে যাবে নাকি থামিয়ে দেবে? স্কুল থেকে একবার জানিয়েছে, স্কুল পরীক্ষা নিতেও পারে। আবার শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, পরীক্ষা হবে না। এই অনিশ্চয়তার জবাব আমাদের কাছে নেই। তবে সিদ্ধান্ত যাই-ই হোক এবারের ও লেভেলের ফল হবে চূড়ান্ত কোনো পরীক্ষা ছাড়াই।
সারাবিশ্বের এই ব্যাচের ছাত্ররা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে নিজেদের মধ্যে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। করোনায় দেশে-বিদেশে থাকা আত্মীয়দের মধ্যে দুজনকে হারিয়েছি। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের জিয়াপুর গ্রামে একই পরিবারের আক্রান্ত দুই শিশুও আমারই গ্রামের এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। এই দুই সহোদরের পিতা মোস্তফা করোনায় বৃদ্ধা মাকে হারিয়েছে। আক্রান্ত দুই শিশুকে দেখভাল করছে মা-বাবা দুজন। তারা তাদের নিজেদের জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে সন্তানদের রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। তবুও এখন সন্তান হারানোর শঙ্কায় জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে এই পরিবার। ফোনে পিতার আহাজারিতে আমিও নির্বাক হয়েছি। তখন আমার কাছে নিজেকে সত্যিই বড় অসহায় মনে হয়েছে। গ্রামের ওই বাড়িটি আগেই লকডাউন করেছে প্রশাসন। ভয়ে আশপাশের গ্রামগুলো পুরো গ্রামকেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গ্রামের ৪শ পরিবারের মধ্যে ৬০টি পরিবার একেবারে হতদরিদ্র ও ভূমিহীন। তাদের অনেকেই এখন না খেয়ে কিংবা পাড়া প্রতিবেশীর দয়ায় কোনোভাবে দিনাতিপাত করছে। চেষ্টা করেও তাদের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। যদিও মানুষের এ অসহায়ত্ব এখন সর্বব্যাপী। বাসার দুই গৃহকর্মী ফোন করেছে, কাজে ফিরতে চায়। প্রতিদিন পেট বাঁচানোর জন্য কিছু বাড়তি খাবার পাবে এই আশায়। ব্যবসায় নিয়মিত কালেকশন বন্ধ হওয়ায় প্রজেক্টের কর্মীদের যথাযথ দেখভাল সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বিপদের সামনেও আমি কিছুটা অসহায়। এতো কিছুর পরও জীবন প্রবাহমান। গৃহবন্দি সন্তানদের হোমওয়ার্ক দিয়েছি। নূরী নামের এক পথশিশুর গল্প লিখে অসমাপ্ত রেখেছি। সমাপ্ত করার কাজ দিয়েছি তাদের। পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। যে যতো ভালো সংযুক্তি ও সমাপ্তি করতে পারবে বিজয়ী হবে সে। আরেকটা বড় কাজ হচ্ছে এই ফাঁকে। সন্তানদের প্রতিদিন বাসার ছাদে তুলে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। বাচ্চারা মন দিয়ে অনুশীলন করায় মনে অনেক প্রশান্তি। নিজের ব্যায়ামের অভ্যাসে সন্তানদের অবশেষে যুক্ত করতে পেরেছি। নিজে এখনো প্রতিদিন ভোরে ধানম-ির নির্জন লেকে শরীরচর্চা করছি।
যে চর্চায় এখনো রোগমুক্ত ও সুস্থ আছি। যদিও লেকে গিয়ে হতাশ হই। কারণ স্বাভাবিক সময়ে লেকে ঢুকেই দেখা পেতাম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, লেখক গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদসহ অনেক প্রিয় মানুষকে। তাদের সঙ্গে সালাম বিনিময়, টুকটাক কথা হতো। দেখা হতো আড্ডার সঙ্গী বিভিন্ন সরকারি কলেজের চারজন সাবেক প্রিয় অধ্যক্ষসহ কয়েকজন সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের সঙ্গে। তাদের কাউকে এখন পাই না। তারা এখন করোনাবন্দি। তখনো নিজেকে আবিষ্কার করি দহনকালের নিঃসঙ্গ ও অসহায় এক সাক্ষী হিসেবে। কবি ও শিক্ষাবিদ হরিশংকর জলদাস সমুদ্রের জেলেদের জীবন নিয়ে দহনকাল নামে অসাধারণ একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। উপন্যাস এবং তার জেলে জীবন নিয়ে হরিশংকর বলেছিলেন ‘বাড়ির পশ্চিমে ছিলো বঙ্গোপসাগর পূর্বে স্কুল। তার বাবা বলতেন, তোমার পশ্চিম এবং পূর্ব দুইদিকই খোলা। আমি চাই তুমি পূর্বদিকে যাও’। হরিদাস পূর্বদিকে গিয়েছিলেন শিক্ষার উদ্দেশ্যে। জেলেদের দহনকালে হরিদাস রাস্তা খোঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার এ দহনকালে আমাদের সামনে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ সব পথই রুদ্ধ। লেখক : সংবাদকর্মী ও উদ্যোক্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়