লায়লা খন্দকার : কোনো বিষয়ে প্রায় কিছু না জেনে অথবা খুব কম বা ভুল জেনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মতামত প্রকাশ অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটি ফেসবুকের ‘অবদান’। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কেউ যেকোনো বিষয়ে লিখতে পারে। কিন্তু সবাইকে যে সবকিছু নিয়ে লিখতে হবে তেমন কোনো নিয়ম আছে কি? কোনো একটি ক্ষেত্রে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করে অর্থপূর্ণ কাজ করতে একজীবনের সাধনার প্রয়োজন। তাই বেশ অবাক হই যখন দেখি যে, সন্ত্রাসবাদ দমন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব নিয়ে কেউ কেউ ঢালাও মন্তব্য করেন।
রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং সমাজের নানাবিষয় নিয়ে আজীবন বিশ্লেষণ করছেন বা বিভিন্ন দেশে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তেমন ব্যক্তিরাও এই মহামারীর পরের জীবন নিয়ে শুধু কিছু পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। সেসময় এখনো আসেনি। কিন্তু ফেসবুক দেখলে মনে হতে পারে যে, কিছু মানুষ সব প্রশ্নের উত্তর জেনে বসে আছেন। কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া শুধু নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপসংহারে পৌঁছে যাওয়া এবং তা অন্যদের জানানোর প্রবণতাটা উদ্বেগজনক। তা বিভ্রান্তি ছড়ায়। অল্পসংখ্যক ব্যক্তি জেনে বুঝে, চিন্তা কতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন। তাদের মতামত আগ্রহ নিয়ে পড়ি।আর ফেসবুক বিপ্লবীদের নিয়ে যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। অনেকে প্রতিদিন নতুন বিষয় নিয়ে ‘বিপ্লব’ করেন। নিজের ঘরে বসে ‘ক্লিক অ্যাক্টিভিজম’ খুব সহজ। গার্মেন্টস মালিকদের সমালোচনা করছেন; ঠিক আছে। যেভাবে তারা শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করেছেন তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তবে আপনার বাসার গৃহকর্মীকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়ার আগে তার কয়েকমাসের বেতন দিয়েছেন? ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির সমালোচনা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু আপনি ট্যাক্সে ফাঁকি দেন না তো? নিজের পেশাগত দায়িত্ব সততা, একাগ্রতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন? শুধু সমালোচনায় কিছু পরিবর্তন হবে না। প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেই আমাদের সমাজটা বাসযোগ্য এবং মানবিক হবে। কিছু মানুষ অন্যের সমালোচনায় সময় ব্যয় না করে নিজেরাই সমাধানের অংশ হোন। যে কোনো দুঃসময়ে সাধ্যমতো এবং কখনো বা সাধ্যের বাইরে গিয়ে মানুষ হয়ে অন্য মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের জন্য শ্রদ্ধা! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :