বিপ্লব বিশ্বাস : [২] দিন রাতের হিসেব না মিলিয়েই করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশের চিকিৎসক ও নার্সরা। সেই নার্স যখন করোনায় আক্রান্ত হয়। তখন তার ওপর নেমে আসে মানবিকতার নিষ্ঠুর কশাঘাত। যেখানে দেশের বাহিরে এ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের বীর উপাদি দিয়ে রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়, ঠিক তখনই ঢাকার একটি হাসপাতালে সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে এক নার্সের ঠাঁই হলো তালপাতার ছাউনি ঘেরা পরিত্যক্ত একটি ঘরে।
[৩] জানা যায়, ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১) করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এর পরই স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুর পারে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।
[৪] সোমবার পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ওই স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লগন্ডা গ্রামে।
[৫] এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।
[৬] জানা যায়, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে ফেরেন। বাড়ি ফেরার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুর পারে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।
[৬] ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মানবতার জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না।
[৭] কান্নাজনিত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনও বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈএর চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
[৮] এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।
[৯] উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টানে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টানে রাখার ব্যবস্থা করব।
অন্যদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়িঘরের ভেতর রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :