শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪২ দুপুর
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হে সেলেব্রিটি হুজুর সমাজ, একবার ভেবে দেখবেন কি?

আরজু আহমেদ : হামদুন আল কাসসার ছিলেন সুফিয়ান আস-সাওরি রহ. এঁর ছাত্র এবং ইসলামের ইতিহাসে বিরল ব্যতিক্রম এক আলেম। ফকীহ এবং সুফী। অথচ তাঁর সমগ্র জীবনের ব্যাপারে কোনও জীবনীকার কোনও আপত্তি উত্থাপন করেন নি।

একবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, 'লোকেদের জন্য সালাফদের কথাবার্তা আমাদের উপদেশের তুলনায় এত অধিক কল্যাণকর ছিল কী কারণে?'

তিনি উত্তর দিলেন, 'তাঁরা ইসলামের চাওয়াকে প্রাধান্য দিতেন। যা বলতেন কেবলমাত্র তা আল্লাহ্‌র জন্য, তাঁকেই সন্তুষ্ট করতে বলতেন।

প্রকারান্তরে আমরা চাই, লোকেদের আমাদের দিকে আকৃষ্ট করতে। আমরা বলি, মানুষকে সন্তুষ্ট করতে। আল্লাহ্‌কে নয় আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে সন্তুষ্ট করতে।'

বিশর ইবনে হারিছ রহ. বলেন, 'যে খ্যাতিকে ভালোবাসে সে আদতে আল্লাহ্‌কে ভয় করে না।'

সাহাবিরা এই লোক খ্যাতির ভয় করতেন। এই খ্যাতি মানুষকে ঔদ্ধত্য ও অহংকারের পথে নিয়ে যায়। সালাফরা বলতেন, 'অহংকার হচ্ছে নিজের ভুল স্বীকার করতে না পারা।'

তাবেয়ী হাবিব ইবনে সাবিত রহ. বর্ণনা করেন, একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কোথাও বেরিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কিছু লোক চলতে শুরু করলো। তিনি ব্যাপারটা লক্ষ্য করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন,

'আপনাদের কি কোনও দরকার আছে আমার কাছে?'

লোকেরা উত্তর দিল, 'না, কিন্তু আপনার সঙ্গে চলাটা আমরা পছন্দ করি।'

তিনি খুব রাগতস্বরে বললেন, 'ফিরে যান। বরং এটা তো অনুসরণকারীর জন্য লজ্জার। আর যাকে অনুসরণ করা হয় তাঁর জন্য ফিতনা।'

একবার উবাই ইবনে কা'ব রা. হেঁটে যাচ্ছিলেন, জনা দশেক ছাত্র তাঁকে ঘিরে ছিল। উমার রা. তখন খলিফা। তিনি হাতে থাকা বেত দিয়ে উবাই ইবনে কা'বকে আঘাত করলেন।'

উবাই রা. বিস্ময়ের সাথে বললেন, 'আমি কি কোনও অপরাধ করেছি?'

উমার রা. বললেন, 'এটা ফিতনা। যাকে অনুসরণ করা হয়, তাঁর জন্যও। যারা অনুসরণ করে তাদের জন্যও।'

আহা! তাঁদের অন্তরে থাকা তাকওয়া, হেদায়তের নূর বহু আগেই তাঁদেরকে অনেক কিছু অনুধাবন করার সক্ষমতা দিয়েছিল।

এই যে সেলেব্রিটিজম, সেলেব্রিটি হুজুর, সেলেব্রিটি শায়খ এইসব নানাবিধ ফিতনা কি আজ আমাদের ঘিরে ধরে নি?

এই যে অগুণতি ভিউয়ার, বিশাল ফ্যানবেইজ। কখনো কখনো ভুলকেও সমর্থন করতে গিয়ে বহুজনের ফ্যানবেইজের বড়ো একটা অংশই অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের যে ইসলামি শিক্ষা এর বাইরে গিয়ে বাকিদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছে। গালাগাল করছে।

অথচ মূল যে ইসলাম তা তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারছে না। এসব আরও গুনাহের পথ খুলে দিচ্ছে। এই যে, আমাদের অনেক জনপ্রিয় শায়খেরা নিজেদের ভুলকে স্বীকার করে নিতে পারেন না। এর মধ্য দিয়ে সালাফদের সেই ফিতনার আশঙ্কাই সত্য বলে প্রতিভাত হয়।

হয়ত চটকদার আলোচনার মধ্য দিয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই আলোচনা যদি রব্বের সন্তুষ্টির জন্য না হয়ে স্রোতার সন্তুষ্টির জন্য হয়- আলোড়ন তৈরি করার উদ্দেশ্য হয়। এর মধ্যে আদতে কোনও কল্যাণ থাকে না। ফিতনার সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয় কেবল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়