শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:১৯ দুপুর
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:১৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] থামছে না মানবপাচার, ৪ মাসে মৃত্যু ৪৯, উদ্ধার ৪৭৬ জন

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] এই মানবপাচারকারীদের মূল্য লক্ষ্য এখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা বলেছেন, উন্নত জীবনের আশা এবং বিয়ে প্রলোভনে তরুণীরা সাগর পাড়ি দেয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন। দালালরা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে। সংশ্লিস্টদের মতে, মানবপাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভারমূতি ক্ষুণ্ন হবে।

[৩] গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে এমন খবরে সীমান্ত ও উপকূলে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরা। পাশপাশি তাদের ঠেকাতে পাহারা বসিয়েছে জেলে ও স্থানীয় লোকজন।

[৪] বুধবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেয়া আনুমানিক ৫০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে বলেছে। মানবাধিকার এ সংস্থাটি বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে গভীর সমুদ্রে আরও একটি জাহাজ থাকতে পারে। যেখানে আরও কয়েকশ রোহিঙ্গা আটকা পড়েছেন।

[৫] টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খান বলেন, সীমান্ত ও উপকূল দিয়ে যাতে নতুন করে কোনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশপাশি স্থানীয়দের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে রোহিঙ্গা বোঝাই কোনও ট্রলার ঢুকতে না পারে।

[৬] পুলিশ ও কোস্টগার্ড জানায়,  ১৫ এপ্রিল টেকনাফে বাহারছড়ায় মালয়েশিয়া যাত্রা ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসা আরও ৩৯৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এসব যাত্রীরা জানিয়েছে, ট্রলারে মারা গেছেন ৩০ জন। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৩৮ জন রোহিঙ্গা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে সেন্টমার্টিনের পশ্চিমে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ওই ঘটনায় ৭২ জনকে জীবিত আর ১৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা এখনও নিখোঁজ।

[৭] টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ইনচার্জ) ওসি মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, সচেতনতার অভাবে রোহিঙ্গারা সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। ফলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে কোনোভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাচার ঠেকানো হবে। আর যেসব পাচারকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

[৮] ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি জানিয়েছে, ভাগ্যান্বেষণে দেশান্তরিত হতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন বহু শরণার্থী। যাদের অধিকাংশ সাগর পথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। ২০১২-১৫ এই ৩ বছরের সোয়া লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন। এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। সেসময় মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের একটি জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান মেলে। এরপর মাঝখানে ২বছর মানবপাচার কমে যায়। এরপর ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এরপর ফের মানবপাচার শুরু হয়। ২০১৮-২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১৬০০ রোহিঙ্গা পাচার হয়। এই সময় ১৫ জন মারা গেছেন। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পাচার হয়েছে। যার মধ্যে বড় অংশ ছিল নারী ও শিশু। এছাড়া ২০১৭ আগস্ট থেকে ২০১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮টি নৌকা ডুবির ঘটনায় ১৯৭  জনের লাশ উদ্ধার এবং অন্তত নিখোঁজ হন ৫০০ জন।

[৯] ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, একটা সময় শুধু রোহিঙ্গা পুরুষরা কাজের তাগিদে সাগর পাড়ি দিতেন। এখন কিন্তু নারী ও শিশু পাচারও বাড়ছে। মানবপাচার বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ট্রাফিকিং ইন পারসন (টিআইপি) প্রতিবেদনে ৩ বছর ধরে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ তালিকায় আছে। সেখানে কিন্তু বারবার রোহিঙ্গা পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। মানবপাচার বন্ধ না হলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যে মানবতার পরিচিতি পেয়েছে সেই ভার্বমূতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কাজেই কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, পাচার বন্ধ করতে হবে।

[১০] কক্সবাজারের আইওএমের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন,  ২০১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ মার্চ পর্যন্ত পাচারের শিকার ৬৫৪ জনকে সহতায় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৫ রোহিঙ্গা। বাকি ৩৫৯ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। পাচার রোধে ক্যাম্পসহ সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় ২০১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ মার্চ পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯৯টি সচেতনতা মূলক আলোচনার মাধ্যামে ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে পাচার রোধে সচেতন করা দেয়া হয়েছে।

[১১] জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে দেড় হাজারের বেশি আশ্রয়প্রার্থী বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়েছে। যা ২০১৩-১৫ সালে সমুদ্র পাড়ি দেয়া মানুষের তুলনায় ৫০ গুণ বেশি। ২০১৫ সালে সমুদ্র যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিল পুরুষ।  কিন্তু ২০১৮ সালের সমুদ্রযাত্রীদের শতকরা ৫৯ ভাগই নারী ও শিশু।

[১২] ট্রলারে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানো জন্য মানবপাচারকারীরা কক্সবাজারের উপকূলের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ব্যবহার করছে। এগুলো হলো, টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালি, রাজারছড়া, নোয়াখালী পাড়া, হলবনিয়া, জাহাজপুরা ঘাট, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, কাটাবনিয়া, মিঠাপানির ছড়া, জালিয়াপালং, ইনানী, হিমছড়ি, রেজুখাল, কুতুবদিয়াপাড়া, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি ও মহেষখালী। এছাড়া সীতাকুন্ড ও মাঝিরঘাট এলাকা হয়েও ট্রলারে মানবপাচার হয়ে থাকে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে স্থানীয়সহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা। তারা সবাই টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এছাড়া মালয়েশিয়া অবস্থানকারী মানবপাচারকারী কয়েকজন রোহিঙ্গার নামও উঠে এসেছে।

[১৩] টেকনাফের লেদা ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, মানবপাচারের জন্য কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প একটা হাব। যেখান থেকে প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া সহজ। ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পাচারকারী ও দালালেরা এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। শিবিরগুলোতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বৃদ্ধি করা দরকার। কেননা অল্পবয়সী রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করছে।

[১৪] কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, বিপুল সংখ্যা রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। সেটি কোনোভাবে নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। তবে সাগরপথে মানবপাচার বন্ধ না হলে, দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

[১৫] কক্সবাজারের জেলা অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, মানবপাচারকারীরা টাকায় লোভে সাগরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তাছাড়া সচেতনতার অভাবে রোহিঙ্গারা সাগর পাড়ি দিচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আর যেসব পাচারকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের ধরতে পুলিশের টিম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

[১৬] বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের চট্রগ্রাম-পূর্ব জোনের স্টাফ কর্মকর্তা (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বিএন) এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, নতুন করে কোনও রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেয়া হবে না। সমুদ্রপথে রোহিঙ্গা বোঝাই কোনও ট্রলার বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করলে, তা প্রতিহত করা হবে। চলতি মাসে কারাগার থেকে ২৫ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার। তাদের অনেককে ট্রলারে উঠিয়ে আমাদের দিকে ঠেলে দেয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জলসীমায় কোস্ট গার্ড ও নৌবাহনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়