শিরোনাম
◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইলিয়াস-লেডুর দ্বন্দ্বে অশান্ত সাতকানিয়ার ধর্মপুর, এ পর্যন্ত মৃত্যু দুজনের, আহত অর্ধশত

চট্টগ্রাম প্রতিদিন :  চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ চৌধুরী এবং যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হোসেন লেডুর দ্বন্দ্বে প্রতিনিয়তই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। তাদের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন এবং আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অন্তত ৫০ জন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়েছেন ১৬ জন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। তারা হলেন যুবলীগ কর্মী জিয়াউদ্দিন ও আফাজ। দুজনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের ফলে অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলার ধর্মপুরের বাসিন্দারা। এমন দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে যে কোন সময় আহতসহ বহু প্রাণহানির আশংকা করছেন ধর্মপুরবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন ধর্মপুরের পরিবেশ অনেকটা শান্ত থাকলেও গত ২১ সকাল ১১টায় মুহুরীপাড়ায় দুই গ্রুপের মারামারিতে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে ধর্মপুরের পরিবেশ। ওই দিন ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ইলিয়াসবিরোধী যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হোসেন লেডু। তার সঙ্গে ইলিয়াস গ্রুপের এক কর্মীর কথা কাটাকাটির জেরেই এ সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় একটি মন্দিরও।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এই দুই পরিবারের সদস্যরা ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরীন ছেলে ইলিয়াস চৌধুরী বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান। তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট ইউনুচ চৌধুরীও একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একইভাবে আব্দুল লতিফের ছেলে গিয়াস উদ্দিন হিরু এবং তার ভাই শাহ আলমও ওই ইউনিয়নে একাধিকবার চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেছেন। তবে গিয়াস উদ্দিন হিরু মারা যাওয়ার পর থেকে এ পরিবারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হোসেন লেডু।

সংঘাতের ঘটনায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ স্থানীয় গ্রাম্য রাজনীতির বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনা। কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত নয়। ধর্মপুরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ গ্রাম্য রাজনীতিতে পক্ষে-বিপক্ষে জড়িয়ে পড়েছে।’

এদিকে ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, একটি কুচক্রী মহল এলাকায় আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবরও কুচক্রীমহল আমার লোকজন ধর্মপুর দরবার শরীফে হামলা করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তদের জড়ো করে ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়িয়ে ধর্মপুরে যে তাণ্ডব চালাতে চেয়েছিল, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও সাতকানিয়া থানা প্রশাসন রাত জেগে সেদিন ধর্মপুরবাসীকে রক্ষা করেছে।

তিনি আরও বলেন, গত ২১ এপ্রিল লেডুর নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার অনুসারী বলে স্থানীয় যুবলীগের ৪ জন নেতাকর্মীকে দা-কিরিচ দিয়ে হামলা চালায়। তারা প্রাণে বাঁচতে হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নিলে সেখানেও তারা হামলা চালায়। এতে হিন্দু পরিবারের কয়েকজন সদস্যও আহত হয়।

তবে যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হোসেন লেডু বলেন, হিন্দুপাড়ার লোকজন ইলিয়াস চেয়ারম্যানের রাজনীতি না করায় সে তার লোক দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মূলত স্থানীয় রাজনীতিতে ইলিয়াসের দাপট ধরে রাখতে এ হামলা চালানো হয়েছে। তার বাহিনীর হামলায় একটি মন্দিরও ভেঙ্গে গেছে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ধর্মপুরের বিষয় নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। একের পর এক ঘটনার বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হাতে এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

ধর্মপুরের বাসিন্দা থানা যুবলীগের সভাপতি আ স ম ইদ্রিস বলেন, আমি পারিবারিক কারণে টেনশনে আছি। তাই এই বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে শুনেছি একটি হিন্দু পাড়ায় হামলা হয়েছে। কেন হামলা হয়েছে সেটা এখনও বলতে পারছি না।

এদিকে রানা দাশ নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদেরকে ইলিয়াস চেয়ারম্যানের রাজনীতি করতে বাধ্য করা হয়। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মূলত মারামারি হয়েছে।

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, এখানে সাম্প্রদায়িক কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়নি। দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখছি। ইতিমধ্যে ঘটনার ইন্ধনদাতা কারা তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাচ্ছে না। শীঘ্রই সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়