ফরিদ আহমেদ : অল্প যে কয়েকটা দেশ কোভিড-১৯ কে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পেরেছে তাইওয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম। ২১ জানুয়ারি তাইওয়ানে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। প্রায় তিন মাস পরে, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাইওয়ানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চারশরও নিচে রয়েছে। যেখানে অন্য দেশগুলোতে এই সংখ্যা বিস্তার লাভ করেছে জ্যামিতিক হারে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন টাইম ম্যাগাজিনে, ‘হাউ মাই কান্ট্রি প্রিভেন্টেড এ মেজর আউটব্রেক অব কোভিড-১৯’ নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রবন্ধে ভদ্রমহিলা কোন পদ্ধতিতে তারা এটা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে কিছুটা সারসংক্ষেপ আমি তুলে দিচ্ছি এখানে।
২০০৩ সালে যখন সার্স দেখা দিয়েছিলো, তাইওয়ান ছিলো আক্রান্তদের মধ্যে অন্যতম। কয়েক ডজন মানুষ মারা গিয়েছিলো সেই সময়ে সার্সের কারণে। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ডিসেম্বরে যখন চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন থেকেই তাইওয়ানের সরকার এবং জনগণ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে একে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। উহান থেকে আসা সব যাত্রীকে মনিটর করা হতে থাকে। জানুয়ারি মাসেই কোভিড-১৯কে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেন্ট্রাল এপিডেমিক কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়। যাত্রীদের গমনাগমনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীদের কীভাবে কোয়ারেন্টাইন করা হবে, সেই প্রটোকলও তৈরি করা হয়। এতো কিছুর পরও কোভিড-১৯-এর আগমনকে ঠেকানো যায়নি। ২১ জানুয়ারি প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। কিন্তু তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ এতে দমে যায়নি। বরং প্রতিটা রোগীর ভ্রমণের ইতিহাস, তারা কাদের সংস্পর্শে এসেছে সেই ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে বের করে এবং তাদের সবাইকে আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। এতে করে কমিউনিটি সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় তারা। শুধু সরকারই এমন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা নিয়েছিলো তা নয়, বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক দালানের ম্যানেজমেন্টও সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসে। বিভিন্ন অফিসে, বিল্ডিংয়ে টেম্পারেচার মনিটরিং মেশিন বসানো হয়, জীবাণুকে ধ্বংস করার ডিজইনফেকশন ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেগুলোতে ঢোকার আগেই।
মহামারির আশঙ্কা দেখা দিলে মানুষ পাগলেরমতো জিনিসপত্র কিনে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। উৎপাদন এবং সরবরাহকে মনিটর করে সেটাকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয় সরকার। প্রচুর পরিমাণে মেডিকেল গ্রেড মাস্ক তৈরির ব্যবস্থাও নেয় সরকার। তাদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো। ফলে হাসপাতাল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, কোথাও মাস্কের কোনো অভাব এখন পর্যন্ত তাইওয়ানে দেখা যায়নি। বরং যে সব দেশে এর স্বল্পতা রয়েছে, সেই সব দেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাইওয়ান। (অংশবিশেষ)। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :