শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০০ দুপুর
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসিনা আকতার নিগার : লক ডাউন  মানলে নিজেদেরই মঙ্গল  

হাসিনা আকতার নিগার :  গলির মুখে দাঁড়িয়ে  করোনাভাইরাসের খবর নিয়ে  ৪/৫ মানুষ আলাপে ব্যস্ত। এ রোগ থেকে বাঁচার  সব  পদ্ধতি জানা তাদের। কিন্তু ঘরে থাকতে মন চায় না। চুপচাপ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জানতে ইচ্ছে হল, কেন ঘরে থাকতে চায় না তারা। একজন খুব তাচ্ছিল্য করে বললো, এসব বড় লোকের ঘর। গরীবের হবে না। আরেকজন বললো, হাত পা ধুই।  কিন্তু  এক রুমের ঘরে ৭/৮ জন মানুষ কতক্ষন একসাথে থাকা যায়।আগে কাজে থাকতাম এখন তো কাজ নাই। এজন্য ঘরের বাইরে আসে বসে দাঁড়িয়ে সময় কাটাই।' এদের কথার রেশ ধরেই এক নারী বললো,  ঘরে বসে থাকলে খাবার কে দিবে। রাস্তায় এলে জানতে পারে কোন নেতা খাবার দিচ্ছে, পুলিশকে বলতে পারে খাবারের কথা।
এ চিত্রের বাইরে আর দু ধরনের মানুষ  লক ডাউনকে মানতে পারছে না।সমাজের উঠতি যুবক ছেলেরা আর নিত্যদিন খাদ্য সামগ্রী ক্রেতা বিক্রেতারা। এ চিত্র  বিশেষ কোন এলাকার নয়।   সারা বাংলাদেশের একই চিত্র। পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টার পরেও মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ মুহুর্তে ঘরে থাকার বিকল্প কিছু নাই। তা জানা সত্ত্বেও মানুষ নিয়ম মানছে না। এ অবস্থা কম বেশি  বিশ্বের সকল দেশে বিদ্যমান। ইউরোপ আমেরিকাতে বিক্ষোভ  সমাবেশ হচ্ছে লক ডাউনের বিপক্ষে।
তবে সংগ নিরোধ, লক ডাউন মেনে না চললে মানব জীবনে ভয়াবহতা নেমে আসবে তা অবধারিত।  উন্নত বিশ্ব  যেখানে  কোভিট -১৯ এর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের দূর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ফলাফল প্রত্যাশিত হবে না এটাই সত্য। তথাপি মানুষ লকডাউনকে নীতিগতভাবে সমর্থন করলে ও তা পালন করতে পারছে না। এমনকি অতিমাত্রার সচেতন ব্যক্তিদের পক্ষেও লক ডাউন মেনে চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। এর অন্তরালের  কারণগুলো  হলো  মানুষের নিত্যজীবনের  চাহিদা। ঘরে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ করার মত সার্মথ্য সবার নাই।  আর সে কারনে বাজার হলো জনগণের অবাধ বিচরনের স্থল। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস বিস্তারের আশংকা বাজারেই বেশি। মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনা বেচা করছে না। যদিও সরকার বাজারগুলোকে খোলা মাঠে বসানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।  এতে যে সমস্যার সমাধান হচ্ছে তা কিন্তু নয়। গ্রামাঞ্চলে অসচেতনাকে কারন হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু  শহরে মানুষের জনসমাগম  অনেকটাই জেনেশুনে বাধ্য হয়ে।
জনবহুল বাংলাদেশে লক ডাউনকে শতভাগ সফল করা কষ্ট সাধ্য। কারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ ইতোমধ্য দিশেহারা। এ অবস্থায়  মানুষের ঘরে খাবার নিশ্চিত করতে পারলে লক ডাউন কঠোর ভাবে পালন করতে বাধ্য করা সম্ভব হবে হয়ত। মানুষকে এ মহামারি থেকে রক্ষা করতে সরকারের থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে না। এ কথা মাথায় রেখে  প্রতি ঘরের একজন মানুষ যদি বাজার করতে বের হয়,  তাহলে খোদ ঢাকা শহরে লকডাউন বিফল হওয়া স্বাভাবিক। কেননা প্রায় দুই কোটি লোকের বাস এ  শহরে।
আবার নিম্নবিত্তের  দিন আনে দিন খাওয়া ' মানুষদের ঘরে থাকা অসম্ভব। এরা  রোজগারের আশায় ঘরের বাইরে  যাচ্ছে। কারণ  করোনাভাইরাস থেকে এদের  কাছে খাবার আর আনুষঙ্গিক খরচের চিন্তা বেশি। অন্য দিকে দোকান পাট খোলার সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে সরকারি ভাবে  । সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। তারপরেও যে মানুষের চলাচল  রয়েছে তা দেখা যায় এলাকায় এলাকায়। পুলিশ আর জনগনের মাঝে চলে গোল্লাছুট খেলা নিত্যসময়। নিয়ম ভাঙা বাঙালির স্বভাব। তাদের কাছে জীবনের চেয়ে চাহিদা  বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রয়োজন বা চাহিদা বুঝে না। আর এ ভাইরাস  ছড়ানো জন্য সময়ের সীমা রেখা নাই। এটি তার পূর্ণ শক্তি  নিয়ে বেঁচে থাকে দিনের পর দিন। সুতরাং   ১২ ঘন্টার বিরতি এ সংক্রামন রোধে কতটা কার্যকর তা প্রশ্নবিদ্ধ।
এ সপ্তাহে শুরু হবে রোজা। এসময় বাজারে জিনিসপত্রের দাম আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ যাদের হাতে টাকা আছে তারাও  বাজার যাচ্ছে জিনিস কিনতে। আর মানুষের ভিড় বিশেষ করে কাঁচাবাজারে বেশি। যা অনেক বেশি আশংকাজনক খবর। অর্থনীতিকে সচল করতে লক ডাউন শিথিল করতে মরিয়া প্রায় সকল দেশ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে 'এটা আগুন নিয়ে খেলার সামিল।হবে,যদি লক ডাউন তুলে নেয়া হয়।'
মানুষকে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানোর লড়াই হতে হবে সম্মিলিত ভাবে। আর তার জন্য সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য কিছু  পদক্ষেপের দিকে লক্ষ্য দেয়া জরুরি। নিম্নবিত্ত  মানুষদের জন্য বরাদ্দকৃত  সরকারি বেসরকারি  ত্রাণ  অবশ্যই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে।   আর্থিক সহায়তা ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিংর মাধ্যমে অতিদ্রুত প্রদান করা উচিত।   জনসমাগম করে কোন ধরনের যাকাত, ইফতার বা খাবার দেয়া যাবে না।  সরকার ঘোষিত রেশন কার্ড বিতরণে স্বচ্ছতা  ও নিয়ম মানতে হবে।
আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বাজার বা সুপার শপে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি সার্ভিসে অভ্যস্থ হতে হবে সবাইকে। একই সাথে হোম ডেলিভারি সার্ভিসকারীরা নিজের আস্থার জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। পন্যের গুনগত মান ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখলে মানুষ হোম ডেলিভারিতে পন্য অর্ডার করবে। প্রতারিত হবার ভয়ে অনেকে হোম ডেলিভারি সার্ভিসে অনাগ্রহী।
আবার  মোবাইল অ্যাপ দিয়ে পণ্যের অর্ডার করা    সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেক    ব্যবহার  ও করতে জানে না। এক্ষেত্রে ফোন কলের মাধ্যমে কেনা কাটার পদ্ধতি চালু  করতে হবে হোম ডেলিভারি সার্ভিস ও ব্যবসায়ীদের।   সকল কিছু সরকার করে দিবে সে আশায় আর বসে থাকা চলবে না। ব্যবসায়ী, জনগনকে ও উদ্যোগ নিতে হবে।
সবাইকে মনে রাখা প্রয়োজন এ লক ডাউনকে সাময়িক সময়ে নিয়ম মেনে পালন করলে সুফল আসবে। আর তা না হলে এর দীর্ঘস্থায়িত্ব জনজীবনকে করবে দূর্বিষহ। আসলে লকডাউন না মানার কারন গুলোকে সমাধান করা অসম্ভব কিছু নয়। তার জন্য সবার আগে মানসিক প্রস্তুতিটা থাকাটা দরকার।   সহজ কথা একটাই   কোভিড ১৯ এর প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারলে কমবে লাশের সারি। আর লকডাউন মানলেই  আসবে সুদিন। আপাতত এর বিকল্প আর কোন কিছু নেই।।
লেখক পরিচিতি : কলাম লেখক। ফেসবুক : https://www.facebook.com/hasinaakhtar.nigar
এসবি
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়