শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:২৩ সকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাবি শিক্ষক ড. মুশতাকের গবেষণা : করোনাভাইরাসের রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা কমেছে  

ডেস্ক রিপোর্ট :  ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব তার গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, কোডিভ-১৯ বৈশ্বিক মহামারির পেছনে দায়ী সার্স-কভ-২ ভাইরাসটির মধ্যে কিছু পরিবর্তনের ফলে ইতোমধ্যে তার রোগসৃষ্টির ক্ষমতা অনেকখানি কমেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আয়ূবের গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলা ট্রিবিউন

গবেষণায় তিনি দেখেছেন, ভাইরাসটির জিনোমে পর পর তিনটি গঠন উপাদান পরিবর্তনের ফলে এর সংক্রমণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। পৃথিবীর যেসব দেশে এই পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ভাইরাসগুলো বেশি পরিমাণে আছে, সেখানে তুলনামূলক কম লোক আক্রান্ত হচ্ছেন।

ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব বলেন, সার্স-কভ-২-এর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করার ব্লুপ্রিন্ট হচ্ছে এর জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল আরএনএ। এই আরএনএর ভেতর মিউটেশনের মাধ্যমে শত শত পরিবর্তন হয়েছে এরই মধ্যে। কিন্তু, এ পরিবর্তনগুলোর ভেতরে কেবল একটি ক্ষেত্র আছে, যেখানে ধারাবাহিক তিনটি অবস্থানে ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং এটি একটি অনন্য বিষয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ওই তিনটি পরিবর্তন ভাইরাসের এমন একটি উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যেটা তার সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন নামে পরিচিত ওই উপাদানটি একটি ভাইরাস থেকে অনেক ভাইরাস তৈরি হওয়া এবং নতুন নতুন কোষকে আক্রমণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব বলেন, ‘অনেক বিজ্ঞানীই সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে নানাভাবে শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, আমার গবেষণাটি পুরো বিষয়টিকে অনেকখানি সহজ করে তুলে ধরেছে। পর পর তিনটি পরিবর্তনকে ভিত্তি করে আমি শ্রেণিবিন্যাস করছি এবং এরকম ঘটনা ভাইরাসের জিনোমের ত্রিশ হাজার বেস পেয়ারের ভেতর কেবল ওই তিনটি ধারাবাহিক অবস্থানেই ঘটে। আর সবক্ষেত্রে সাধারণত আলাদা আলাদা করে একটি করে অবস্থানে পরিবর্তন হয়। তাই, আমার শ্রেণিবিন্যাসটি একটি স্থিতিশীল ভিত্তি দিচ্ছে। যার আলোকে ভাইরাসের অন্যান্য পরিবর্তনকে অনুসরণ করে তাদের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করা সহজতর করে তুলবে।

এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এতে দেখানো হয়েছে যে পৃথিবীর যেসব দেশে এই পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ভাইরাসগুলো বেশি পরিমাণে আছে, সেখানে তুলনামূলক কম লোক আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলোর ভেতর জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এসব জায়গায় কভিড-১৯-এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। অপরদিকে পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এসব দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এসব দেশে ভাইরাসের জিনোমে উল্লিখিত পরিবর্তনগুলো বেশি হয়েছে।

শুধু আক্রান্ত সংখ্যাই নয়, বরং এই গবেষণায় তিনি বিভিন্ন দেশে কেন কোভিড-১৯-এ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যার বড় তারতম্য হচ্ছে তাও ব্যাখ্যা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কিংবা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ কম বেশি হওয়ার পেছনে তিনি তার গবেষণায় পাওয়া মিউটেশনগুলোকে দায়ী বলে মত প্রকাশ করেছেন।

ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব বলেছেন, তার গবেষণাটি বাংলাদেশে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের জেনেটিক তথ্য জানার গুরুত্ব নতুন করে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে কোন ধরনের সংক্রমণ-ক্ষমতার ভাইরাইস আছে সেটি জানা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে আমরা এই সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি আরও নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবো। সরকারকে এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আয়ূবড. মুশতাক ইবনে আয়ূব তার গবেষণা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা আক্ষেপের বিষয় যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ তাদের শতাধিক ভাইরাসের জিনোম তথ্য উদঘাটন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে একটিও হয়নি। আসলে আমাদের দেখা দরকার বাংলাদেশে কোনটা এসেছে। দেশের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের নিয়ে এখনই কাজটি করা দরকার বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে তিনি দেশের তরুণদের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার ভাইরাসের জিনোম তথ্য পাবলিক ডেটাবেসে পাওয়া যাচ্ছে, তাই এই তথ্য ব্যবহার করে আমাদের তরুণদের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব।

গবেষণাটির বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেকোনও দেশে যখন একটি ভাইরাস আক্রান্ত করে তখন তার কিছু দিনের মধ্যেই এমন একটা গবেষণা করা উচিত। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেই কাজটি করেছেন। আমরা অন্যান্য দেশের ভাইরাসগুলো মিলিয়ে দেখতে পারি। ভাইরাসের যে পরিবর্তন এসেছে সেই পরিবর্তন হয়তো রোগ সংখ্যা কমাতে পারে। কিন্তু এটা বলা যাবে না যে আমাদের দেশে রোগী কম।

তিনি আরও বলেছেন, আমাদের আগে যে দুর্বলতাগুলো ছিল তা এখনও রয়ে গেছে। সেই দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। আমরা সব স্থানেই আশার কথা শুনতে চাই।

 

মিনহাজ/বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়