আব্দুন নূর তুষার : মানুষ খাদ্য শৃঙ্খলের একদম উপরে বসে আছে। এর কারণ কী? মানুষের দাঁত, নখ, পেশী, গতি, কোনোটাই শিকারি প্রাণীদের মতো নয়। স্রষ্টা মানুষকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তারপরও মানুষ আছে খাদ্য শৃঙ্খলের উপরে। এর কারণ হলো মানুষ তার এই না থাকাকে পুষিয়ে নিয়েছে অস্ত্র দিয়ে। টিকে থাকার অদম্য স্পৃহা ও মস্তিষ্কের উন্নতি দিয়ে। পাথর, ধাতু, এরপর আগ্নেয়াস্ত্র। জাল, বড়শি সবই তো বুদ্ধির খেলা। এই অবস্থা একদম বহু বহু বছর ধরে চলছে। এখন কিছু লোক বলতে শুরু করেছেন ঈশ্বর ডলফিনের, ঈশ্বর হাতির। ঈশ্বর চিরকালই সবার ছিলেন এবং তিনিই এই দুর্বল মানুষকে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের উপরে বসিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি কোরআন শরীফে বলেছেন, তিনি হাক্কুল ইবাদ ক্ষমা করবেন না। অর্থাৎ বান্দার প্রতি অন্যায় আচরণ তিনি ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেছেন, হাক্কুল ইবাদ লঙ্ঘন করলে যে বান্দার প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, সে মাফ করে না দিলে তিনি মাফ করবেন না। সারা পৃথিবীতে সম্পদের অসম বণ্টন, ক্ষমতাবানদের অত্যাচার, এতিম মিসকিনদের সম্পদ আত্মসাৎ আল্লাহ কি এসব ক্ষমা করবেন? মানুষের টাকা মেরে দিয়ে কানাডা চলে যাওয়া, অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া। সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা ব্যাংক থেকে ধার হিসেবে নিয়ে শোধ না করা। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা। কী করে না মানুষ। এখনো মানুষ মানুষকে বিক্রি করে। নদী, জলাভূমি, জমি, বাড়ি দখল করে হাউজিং ব্যবসা করা। দুর্নীতি করা। নকল ভেজাল পণ্য সরবরাহ করা। অপরাধের তালিকা কেবল দীর্ঘ হতেই থাকে। প্রার্থনা যদি তিনি শুনে থাকেন, তবে তিনি মানুষের প্রার্থনাই শুনেছেন। তিনি সারা পৃথিবীর অসংখ্য অত্যাচারিতের প্রার্থনা শুনেছেন। সেখানে কিছু ডলফিন, হাতি ঘোড়া থাকতে পারে। কিন্তু তিনি মূলত মানুষের হাহাকারই শুনেছেন।
হাতি ঘোড়ার উপর অত্যাচারের শাস্তি মনে করে বরং আমরা মানুষের সঙ্গে করা অন্যায়কে উপেক্ষা করছি। মানুষ মানুষের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি অন্যায় করে। বিচার হলে এসবের বিচারই হচ্ছে। সম্পদ নামের এই বায়বীয় বিষয়টি ব্যবহার করার ফলে পৃথিবীতে সবার জন্য খাদ্য উৎপাদন হওয়ার পরও সবাই খাওয়া পায় না। সবার থাকার জন্য মাটি থাকার পরও সবাই মাটি পায় না। মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে ভেবে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। হয়তো এটাই প্রাপ্য আমাদের। আমরা যখন আমাদের সৎবুদ্ধি হারাই, আমরা তো মানুষই থাকি না আর। নমরুদ হয়ে যাই। ডাইনোসরের মতো আমরা বিলুপ্ত হয়ে গেলে, আমাদের অত্যাচারের ইতিহাস বহন করে বেঁচে থাকবে পৃথিবী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :