ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ক্যাপ্টেন নিলেশ গান্ধীর তেলবাহী জাহাজটি গত ফেব্রুয়ারিতে করোনাকবলিত চীনে অবতরণ করে। তখনই বুঝতে পারছিলেন যে সেখান তিনি অবতরণ করতে পারবেন না। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানে দেশে যাওয়াও হবে না তার। এরপর তার ট্যাঙ্কার যায় সিঙ্গাপুরে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলও তিনি সেই জাহাজে কাজ করতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর আগেই সেখানে নাবিকদের জাহাজ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরের সপ্তাহে তিনি নোঙর করেন শ্রীলঙ্কায়। সে দেশের সরকারও নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের অনুমতি দেয়নি। এরপর তার জাহাজ পৌঁছায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানেও তাকে একই পরিণতি ভোগ করতে হয়। সমকাল, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস
[৩] নিলেশ গান্ধী একা নন। করোনা ভাইরাসের কারণে তার মতো প্রায় দেড় লাখ বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক ও কর্মী এই মুহূর্তে সমুদ্রে আটকা পড়ে আছেন। তাদের অনেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজ থেকে নামতে পারছেন না। ফলে তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনকারী জাহাজগুলোকে বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দিলেও নাবিকদের অবতরণের সুযোগ দিচ্ছে না। জাহাজ থেকে টেলিফোনে ৩৮ বছর বয়সী নিলেশ বলেন, তিনি বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। ভারতের মুম্বাইয়ে তার স্ত্রী ও ছেলে তার জন্য উৎকণ্ঠায় আছেন।
[৪] একটি পণ্যবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেন রাজনীশ শাহর জাহাজ নোঙর করেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। বিবিসিকে তিনি জানান, তার চুক্তির মেয়াদ ছিল চার মাস, যা শেষ করে তার ভারতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা ভাইরাস লকডাউনের কারণে এখন ৮ মাস তিনি জাহাজে বসে আছেন। তার জাহাজের কোনো কোনো কর্মী প্রায় এক বছর জাহাজে কাটাচ্ছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ক্রুদের ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার দায়িত্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু আমিও বাবা এবং স্বামী। আমিও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং মনমরা হয়ে আছি।
[৫] শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা নাবিকদের সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু অনেকেই বলছে তারা যথেষ্ট করছে না। নাবিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা হিউম্যান রাইটস অ্যাট সি নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ডেভিড হ্যামন্ড বলেন, জাহাজে যারা কাজ করেন তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না, তারা বিশ্বের মানুষের কাছে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেয়।
[৬] এ ধরনের জাহাজের নাবিকদের চুক্তি হয় সাধারণত ৩ থেকে ৯ মাসের জন্য। এ সময় তাদের সপ্তাহের সাতদিনই দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয়। বিনিময়ে তারা মাসে বেতন পান ৪০০ থেকে এক হাজার ডলার। আর ক্যাপ্টেনরা পান সাধারণত এক হাজার ডলার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এ ধরনের নাবিকদের চুক্তির মেয়াদ শেষে জাহাজ মালিকদের খরচায় দেশে পৌঁছে দেয়া হয়। বাণ্যিজিক জাহাজের ক্রুদের বড় অংশই ফিলিপাইন, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন ও রাশিয়ার নাগরিক।
আপনার মতামত লিখুন :