শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ০৯:০৬ সকাল
আপডেট : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ০৯:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বৃহত্তর ঢাকায় সংক্রমণ বেশি চার কারণে

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) দেশের আট বিভাগের ৫৫টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭৩ ভাগ রোগী ঢাকা বিভাগের। সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা শহরে আর জেলা পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। মোট করোনা রোগীর ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ ঢাকা শহরে আর ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ ঢাকার বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। জেলাগুলোর মধ্যে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। চারটি কারণে এসব জেলায় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

[৩] এদিকে ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩৯০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৭৭২ জনে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মারা গেছেন ১০ জন। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২০ জনে।

[৪] সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, দেশের প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। ওই দিন তিনজন রোগী পাওয়া যায় রাজধানী ও এর বাইরে মাদারীপুর জেলায়। প্রথমদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর ক্লাস্টার এরিয়া

হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংক্রমণ রোধে ক্লাস্টার এরিয়া লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন করার পর ক্লাস্টার এরিয়া মাদারীপুরে সংক্রমণ বিস্তার বেশি না হলেও ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এর পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ বিভিন্ন স্থানে গমন করায় সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। এরই মধ্যে বেশি সংক্রমণ ছড়াতে থাকে গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলছে।

[৫] প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের যেসব স্থানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা শহর। এর পরই আছে ঢাকা বিভাগের চারটি জেলাÑ নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী। এসব জেলায় ক্লাস্টার এরিয়ার সঙ্গে মুভমেন্ট বেশি থাকা, প্রবাসীর সংখ্যা বেশি, ঘনবসতি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।

[৬] এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশের আটটি বিভাগের ৫৫টি জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এই ভাইরাসের শনাক্তকৃত রোগীর শতকরা প্রায় ৭৩ ভাগ হচ্ছে ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রোগী ঢাকা সিটির। এর পরই আছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী। এসব জেলায় মূলত চারটি কারণে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। প্রথমত এসব জেলায় বিদেশ ফেরত মানুষের সংখ্যা বেশি। অনেক প্রবাসী আছেন, যারা কোয়ারেন্টিনের শর্তগুলোতে ঠিকভাবে পালন করেননি। দ্বিতীয়ত জেলাগুলোতে মানুষের মুভমেন্ট বেশি হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সংক্রমিত এলাকার মানুষের সেখানে মুভমেন্ট রয়েছে। এতে করে সংক্রমণ বাড়ছে। তৃতীয়ত হচ্ছেÑ এলাকাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। ঘনবসিতপূর্ণ এলাকায় বেশি সংক্রমণ ছড়ায়। চতুর্থত এসব জেলায় মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন, গণজমায়েত করছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বিধায় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের আটটি বিভাগের ৫৫টি জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। করোনা রোগীর শতকরা ৭৩ ভাগ হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ।

[৭] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগের ৭৩ শতাংশ রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রোগী ঢাকা সিটিতে। মোট করোনা রোগীর ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ ঢাকা শহরে আর ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ ঢাকার বিভাগের ১৩টি জেলায়। জেলাগুলোর মধ্যে সংক্রমণ বেশি অর্থাৎ সর্বোচ্চ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে ৪৯৯ জন। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৬৪ জন। নারায়ণগঞ্জে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে। সারাদেশে মৃত্যু হার প্রায় ৪ শতাংশ হলেও নারায়ণগঞ্জে মৃত্যুর হার ৭ শতাংশের বেশি।

[৮] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার পরের অবস্থানে রয়েছে গাজীপুর জেলা। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ২৬৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং ২ জন মারা গেছেন। কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৪৬ জন শনাক্ত ও একজন মারা গেছেন। এ ছাড়া নরসিংদী জেলায় ১৩৬ জন শনাক্ত করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ শহীদ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, আমাদের এখানে করিমগঞ্জে প্রথম যিনি মারা গেছেন ওই রোগী ঢাকা থেকে এসেছিলেন। তিনি করোনা সংক্রমণের বিষয়টি আনসাসপেক্টেড ছিল। বিষয়টি জানত বিধায় অনেক চিকিৎসক তার সংস্পর্শে ছিলেন। এটি একটি কারণ। দ্বিতীয়ত, তাড়াইল যে রোগী শনাক্ত হয়েছেন তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি অনেকের সংস্পর্শে গিয়েছেন। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের মানুষ লকডাউন বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। এটিও একটি কারণ।

[৯] করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত আটটি বিভাগীয় কমিটির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস হচ্ছে ইমিগ্র্যান্ট ভাইরাস। এই ভাইরাসটি বিদেশ ফেরত মানুষের মাধ্যমে দেশে এসেছে। প্রথমে বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করেছেন। এ কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ট্রান্সমিট বেশি হয়েছে। এর পর সংক্রমিত মানুষ বিভিন্ন জেলায় গেছে এবং সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গাজীপুরে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, কারণ নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশি মানুষ সেখানে গেছেন। এভাবে আস্তে আস্তে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে গেছে। মূলত বিদেশ ফেরত মানুষ ঢাকায় বেশি অবস্থান করেছেন সেজন্য ঢাকায় এর প্রকোপ বেশি।

তিনি আরও বলেন, এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে আইসোলেট করতে হবে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে আ্ইসোলেট করতে হবে। তা হলে সংক্রমণ রোধ করা যাবে।

[১০] গতকাল বুধবার দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২০ জনে। ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৯০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৭৭২ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন পাঁচজন, এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ৯২ জন।

[১১] অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ সাতজন এবং নারী তিনজন। এর মধ্যে সাতজন ঢাকা শহরের এবং তিনজন হচ্ছে ঢাকা বাইরের ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার। এদের মধ্যে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুজন আছেন।

অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৫০ জনকে, এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে নেওয়া হয় ৯০০ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৫ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৫৯৪ জন।আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়