শরীফ শাওন : [২] সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেছেন, ডা. মাঈনুদ্দিনের মৃত্যুতে জ্ঞাত লোকজন থেকে নির্ভরযোগ্য বৃত্তান্ত পেয়েছেন। তার মতে ডা. মাঈনুদ্দিন অত্যন্ত মেধাবি ও জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন। ভালো মানুষ ছিলেন। তার অকাল প্রয়াণে সবাই ব্যথিত। প্রতিটি মৃত্যু যেকোন পরিবারের জন্য, তার বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
[৩] বুধবার আমাদের নতুন সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান ‘আমার ১০ মিনিট অনুষ্ঠান’ এ ডা. মাঈনুদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে অনুসন্ধানভিত্তিক পর্যালোচনা করেন।
[৪] তিনি বলেন, ডা. মাঈনুদ্দিন ৪ এপ্রিল প্রথম কোভিডের উপসর্গ টের পান।
[৫] নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ৫ এপ্রিল তার টেষ্ট করানো হয়। সেদিন রাতেই বা ৬ এপ্রিল তিনি জানতে পারেন, তিনি কোভিড-১৯ পজেটিভ। অর্থাৎ তাকে একজন কোভিড আক্রান্ত রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। শনাক্ত হওয়ার পর, স্বাভাবিক প্রটোকল অনুযায়ী তিনি প্রথমে বাসায় থাকেন। তখন তার অবস্থা স্থিতিশিল ছিলো। কিন্তু ৭ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসা পেতে তিনি সিলেটের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার এক্সরে করা হয়। এক্সরেতে তার ফুসফুসের ডান পাশে একটা অপাসিটি দেখা যায়। যেটা খারাপ লক্ষণ। এর কারনেই তার সহকর্মী, বন্ধু ও আত্মীয়রা তাকে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেন। তারা একটি অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবস্থা করেন। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়। ৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার সময় তারা সিলেট থেকে রওনা হন। পথে তাকে সবসময়ই অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। সেদিন আনুমানিক রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছান। সেখানে তাকে ভর্তি করে সরাসরি আইসিইউতে রাখা হয়। তখনও তার অবস্থা স্থিতিশীল ছিলো। তারপরও তাকে আইসিইউতে যত্নের জন্য অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। ৯ থেকে ১০ এপ্রিল তিনি সেখানেই
[৬] জনাব নাঈম বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসায় ঘাটতির কোন সংবাদ পাইনি। তখন সুস্থবোধ করছিলেন তিনি। উপসর্গটি তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেনি। তবে ফুসফুসের ডানে থাকা অপাসিটি ধীরে ধীরে পুরো ফুসফুসে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। তবুও তিনি এতটাই ভালোবোধ করছিলেন যে, তিনি চিকিৎসকদের বলেছিলেন, তাকে কেবিনে ফিরিয়ে দিতে। তবে চিকিৎসকরা তা করেননি। আক্রান্ত হবার কারণে তার ফুসফুসে এক ধরনের ফ্লুইড জমেছিলো। যাকে ডাক্তাররা এ আর ডি এস বলেন। এটির কারণেই তার শাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা তৈরি হয়। মুলত এর কারনেই ফুসফুসজুড়ে ফ্লুইড জমে, ডাক্তারদের মতে এটা বাইলেটারেল অপাসিটি।
[৭] তিনি আরো জানান, কোভিড রোগীদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিসপ্রোপোরশনেট অপাসিটি হয়ে থাকে। এর মানে ফুসফুসে অপাসিটি যতটা ব্যপকতা লাভ করে রোগী ততটা অসুবিধা অনুভব করেন না। এ কারণেই এটা বাড়লেও ডা. মাঈন উদ্দিন খারাপ অনুভব করছিলেন না। ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ আর ডি এস তার ফুসফুসকে গ্রাস করছিলো। ১৩ এপ্রিল তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া হয়। ১৪ ও ১৫ এপ্রিল তিনি ভেন্টিলেটরেই ছিলেন।
[৮] তার রক্তে অক্সিজেনের সেচুরেশান ১৩ এপ্রিল ৯০ এর নিচে নেমে আসে। এমতাবস্থায় তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া হয়। এরপর তার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিলো। অবশেষে ১৫ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৫টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজিউন।
[৯] নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, তার চিকিৎসায় ১২ জন চিকিৎসকের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিলো। এটা একটা অসাধারণ ব্যবস্থা। বন্ধুরাও খোজ খবর রেখেছিলেন। মেডিসিন সোসাইটি সার্বক্ষণিক খোজ রেখেছিলেন। তিনি সব মিলিয়ে অত্যন্ত উচ্চমানের চিকিৎসা পেয়েছিলেন।
[১০] জনাব খান আশ্বস্ত করে বলেন, ডা. মাঈন উদ্দিনের চিকিৎসায় কোন অবহেলা হয়নি। তার অনুসন্ধানে পেয়েছেন, ডা. মাঈনুদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত ভাগ্যবান। এই অর্থে যে, তার অনেক শুভাকাঙ্খি বন্ধু ছিলো এবং দুর্লভ ও দামি সব ওষুধ দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়েছিলো। এসব অনেক সাধারণ নাগরিক পাবেন না।
[১১] তিনি বলেন, ডা. মাঈনুদ্দিন কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ওসমানি মেডিক্যাল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সেখানে, প্রাইভেট প্রেক্টিস বা অন্য কোথাও তিনি কোন না কোন ভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হতে পারে হাসপাতালে কোন রোগী বা অন্য কোন নাগরিকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। হতে পারে প্রাইভেট চেম্বারে কোন রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আমরা তার আত্মীয় স্বজন কারও কাছ থেকে সংক্রমণের উৎসের তথ্য পাইনি। তারপরও থেমে থাকেনি তার মৃত্যু।
[১২] নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, কোভিড-১৯ যেখান থেকেই আমাকে বা আপনাকে আক্রমন করবে, তা বিপজ্জনক। ঘরে থাকা ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পরামর্শ ব্যাক্ত করে সকলকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :