ডেস্ক রিপোর্ট : [২] এদের বেশির ভাগই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চান। তবে বিষয়টি এই সেবার আওতায় না পড়লেও মানবিক দিক বিবেচনায় সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু ফোন কল তথ্যসেবা হেল্পলাইন-৩৩৩ কর্তৃপক্ষের কাছেও ট্রান্সফার করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যায়যায়দিন
[৩] ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, করোনা সম্পর্কিত অনেক কল পাচ্ছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ কলারই ত্রাণ চাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ সদরে বসে ওই ব্যক্তির আসলেই ত্রাণের প্রয়োজন আছে কি না তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তারা কলগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, জেলার এসপি ও ইউএনওদের কাছে ট্রান্সফার করছেন। তারা যাচাই-বাছাই করে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ৩৩৩ তেও কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে। যেহেতু জরুরি সেবায় আগে কখনো ত্রাণের সহায়তার কল আসেনি। এ কারণে বিষয়টি নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এই ধরনের ফোনকলের সংখ্যা এখন থেকে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।
[৪] করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ৯৯৯ এ কলের সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে বিষগুলো নথিভুক্ত শুরু করে পুলিশ সদর দপ্তরের এই শাখাটি। এর মধ্যে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৯৯ এ ২ লাখ ১১ হাজার ২৪৪টি কল আসে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬২৯ জনকে বিভিন্ন ধরনের পুলিশি সেবা দেওয়া হয়।
[৫] ৯৯৯ সূত্র জানায়, ২ লাখ ১১ হাজার কলের বিপরীতে ২ লাখ ৩ হাজার ৬১৫ কল যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই করোনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানায়। পাশাপাশি তারা সবাই ত্রাণের জন্য পুলিশ সদস্যদের সহায়তা চায়। অনেকে আবার কান্নাকাটিও করেন। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় এ ধরনের কলগুলো আলাদাভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে এ ধরনের কল আসার পর সেগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর থানার ওসিরা নীরবেই এসব ব্যক্তির ঘরে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। আবার জেলা শহরের ফোনগুলোও একইভাবে থানার ওসিদের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু জেলার ওসিদের কাছে পর্যাপ্ত সহায়তা করার মতো সামগ্রী না থাকায় এ ধরনের কলগুলো ইউএনওদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেক কলের গুরুত্ব বিবেচনা করে আবার জেলার পুলিশ সুপারদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপাররা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করে ডিসিদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।
[৬] ঢাকার পাশের একটি জেলার পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গার্মেন্টের শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসার পর তারা বেতন না পেয়ে খাবারের জন্য ৯৯৯ এ কল দেওয়া শুরু করে। এরপর সেখান থেকে বেশির ভাগ কল এসপি ও থানার ওসিদের কাছে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর পুলিশের সাধ্যমতো তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের সাধ্যে ছিল না সেখানে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি ব্যক্তিকে সহায়তার আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
[৭] ৯৯৯ এ কল করে ত্রাণের সহায়তা পাওয়া মিরপুরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ১৮ এপ্রিল তিনি ৯৯৯ এ কল করেন। এরপর বাসায় খাবার নেই বলে জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা জানান, ৯৯৯ কাউকে ত্রাণের সহায়তা করে না। এরপর তিনি একটু অনুনয় করলে তাকে মিরপুর থানার ওসির কলে যুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে তার মোবাইল ফোন নম্বর রেখে গভীর রাতে পুলিশ সাধ্যমতো চাল-ডাল-পেঁয়াজ, আলু, আটা ও তেল বাসায় পৌঁছে দেন।
[৮[ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে ৯৯৯ এর পাশাপাশি হেল্পলাইন-৩৩৩ এও অনেক কল এসেছে। তারাও খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা সহায়তার মতো অতি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছেন। গত ২৯ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ২১ দিনে জাতীয় তথ্যসবা হেল্পলাইন-৩৩৩ ফোন পেয়ে ৮ হাজার ৪০০ জনের বাসায় খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিয়েছে।
[৯] সরকারের এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ইকবাল হোসাইন সোহেল বলেন, '৩৩৩-এ ফোন পেয়ে আমাদের সাধ্যমতো মানুষকে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে স্থানীয় প্রশাসন।অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :