মাজহারুল ইসলাম : [২] করোনা সংকটের এ সময়ে সবার চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে মানুষ চিনিয়ে দিলেন ভিক্ষুক নজিম উদ্দীন। যমুনাটিভি
[৩] ঘটনাটি শেরপুরের গান্দিগাও গ্রামের। হতদরিদ্র নজিম উদ্দিন ভিক্ষা করেই জীবন চালান। ছোট্ট একটা ঘর তোলার আশায়, ভিক্ষার ঝুলির দুই টাকা, পাঁচ টাকা দিয়ে তিনবছর ধরে জমিয়েছেন দশ হাজার টাকা। কিন্তু শীর্ণ দেহের মানুষটির কলিজা যে আসমানের মতো, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
[৪] করোনা দুর্যোগের মধ্যে হতদরিদ্রদের সহায়তার জন্য তালিকা করছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা। ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে চলছে এ কর্মযজ্ঞ। এ কাজে ভিক্ষুক নজিম উদ্দীনের বাড়িতে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। নজিম তাদের কাছে জানতে পারেন, সরকারের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য এ তালিকায় তার নাম দেয়া হবে। নজিম বলে ওঠেন, আগে মানুষের জীবন বাঁচুক। এই বলে তিনি ঘর তোলার জন্য জমানো ১০ হাজার টাকার পুরোটাই তুলে দেন বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে। বিষয়টি হতবাক করে তোলে ইউএনও, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ উপস্থিত সবাইকে।
[৫] ভিক্ষুক নজিম উদ্দীন বলেন, বাড়িতে আমার প্রতিবন্ধী বউ আছে। আমি খেতে পারিনা ঠিকমতো। মানুষের বাড়ি থেকে চেয়ে খাই। কিন্তু, আমার কাছে তো কিছু টাকা আছে, অনেকেরতো তাও নাই। মানুষ যদি না বাঁচে তো আমার বাড়ি দিয়ে কী হবে। আর আমার বয়স হয়েছে, মরে গেলে এই টাকা দিয়ে কী করবো।
[৬] ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, অন্যদিনের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্যাসিফিক ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছিল। এরমধ্যে একজন ভিক্ষুকের অনন্য নজীর সবাইকে হতবাক করেছে। তার মতো সব শ্রেণিপেশার মানুষকে হতদরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। এসময়, নজিম উদ্দীনের ভরণ-পোষণে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন ইউএনও রুবেল মাহমুদ।
[৭] ঝিনাইগাতির প্যাসিফিক ক্লাব সভাপতি ও চিত্র পরিচালক আবু রায়হান জুয়েল বলেন, নজিম যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন তা থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিত। দেশের অনেক মানুষের দশ হাজার টাকা করে দান করার ক্ষমতা আছে। কেউ দান করেন, কেউ করেন না। অথচ সঞ্চয়ের শতভাগই নজিম উদ্দীন তুলে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। তাকে দেখে কিছু মানুষ সিকি ভাগ দিতে এগিয়ে এলেও এই দুর্যোগে কাউকে না খেয়ে থাকতে হতো না।
আপনার মতামত লিখুন :