অঞ্জন রায় : এই মহামারি শেষে আমরা কতোটা শিক্ষা নেবো? নিশ্চয়ই এই ভাইরাস মানবকুলকে ধ্বংস করে দেবে এমন নয়, তবে এটা সত্যিÑ আমরা যে মানবকুল প্রাণ আর প্রকৃতি হত্যা করে নিজেদের সক্ষমতার বাহবা নিয়েছি, বন্যপ্রাণীদের আবাস দখল করেছি, মহাসাগরের পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের শক্তির প্রমাণ করেছি, পাহাড় ভেঙে খুঁজেছি খনিজ সম্পদ, বাস্তচ্যুত করেছি প্রকৃতির সন্তানদের, বাঘ থেকে দোয়েল– আমাদের বুলেটে হয়ে উঠতে চলেছে বিপন্ন। সেই আমরা এই ভাইরাসের ভয়ে ঢুকে পড়েছি ঘরে, আর আমাদের পথঘাটে প্রকৃতির সন্তানেরা। আমাদের কি শিক্ষা হবে? যখন দেখছি পুঁজির স্বর্গরাজ্য আমেরিকায় ভেঙে পড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা, ইউরোপজুড়ে লাশের মিছিল, এশিয়া, মধ্য এশিয়াসহ গ্রহজুড়ে ঘরবন্দি মানুষ। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মনে কাজ হারানোর ভয়। আমাদের করোনাঝড় শেষে কি মনে থাকবে সারিবদ্ধ শেষকৃত্যের অপেক্ষায় থাকা কফিনগুলোর কথা? নাকি আমরা আবারও ব্যস্ত হবো শক্তির পরীক্ষা দিতে?
ভেবে দেখুন গত কয়েক দশকে মানুষ খুন করতে অস্ত্র বানাতে এই গ্রহে যতো টাকা ব্যয় হয়েছেÑ তার তুলনায় কতোটা কম খরচ হয়েছে চিকিৎসা আর স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে? আমাজনের প্রাণীদের গায়ে আমরা জিপিএস ট্র্যাকার বসিয়েছিÑ অথচ নিউইয়র্ক শহরে মহামারি মোকাবিলায় হাসপাতালের পাশে তাঁবুতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জানি এই মহামারি শেষে একটা উজ্জ্বল সকাল আসবেÑ লকডাউন শেষে আবারও পথে নামবে মানুষ। জানি না, সেই মানুষের দলে আমি নিজে থাকবো? নাকি কোনো একটা হাসপাতাল বা বাসায় একটুকরো বাতাস না পেয়ে মৃত্যু শব্দটাকে স্পর্শ করবো। কয়েকদিন এই ছবিগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছেÑ যে প্রকৃতিকে আমরা দুপায়ে দলেছি। সেই প্রকৃতিতে তাদের অধিকারটুকুও তো আমার আপনার সমান। একটাই স্বপ্ন দেখি করোনাঝড় শেষে কারও একার নয়Ñ পৃথিবীটা যেন সবার হয়। মানুষ আর প্রকৃতি যেন পাশাপাশিই থাকে। কোনো ডলফিনের লাশ থাকবে না সৈকতেÑ আপনার বারান্দায় সকালে শীষ দেবে দোয়েল বা টুনটুনি। প্রকৃতি মুক্ত হবে মানুষের আগ্রাসী থাবা থেকে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :