রাজু আলাউদ্দিন : [২] ২০১৬ সালে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে ১২ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয় অজানা রোগে। ওই এলাকার আরো প্রায় ১১৫ জন অল্প সময়ের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে জানা যায়, তারা সবাই একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত। যার নাম ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস বা অ্যান্থ্রাক্স। বিশেষজ্ঞরা পরে গবেষণা করে বের করেন, ১৯৪১ সালে একটি বলগা হরিণ মারা গিয়েছিলো। ৭৫ বছর আগে মারা যাওয়া ওই হরিণটি থেকে রোগটি ছড়িয়েছে। আবহাওয়া অধিক উষ্ণ হওয়ায় সেখানকার বরফায়িত মাটি বা পারমাফ্রস্ট গলে বেরিয়ে এসেছিলো সেই অ্যান্থ্রাক্স।
[৩] ২০১৫ সালে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকরা তিব্বতে গলিত তুষারের স্রোত থেকে ২৮টি নতুন ধরনের ভাইরাস খুঁজে পান। সম্প্রতি বায়োরিভ নামে একটি ওয়েবসাইটে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, গবেষকরা ১৬৪ ফুট গর্ত খুড়ে ১৫শ' বছরের পুরনো গ্লাসিয়ার থেকে দুটি নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে তারা মোট ৩৩ ধরনের ভাইরাসের সন্ধান পান যার মধ্যে ২৮টি ভাইরাসই আগে কখনো কেউ খুঁজে পাননি।
[৪] পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত গলছে তিব্বত থেকে শুরু করে মেরু অঞ্চলসহ উত্তর গোলার্ধের তুন্দ্রা, সাইবেরিয়া আলাস্কা এবং গ্রিনল্যান্ড অঞ্চলের বরফ। ভয়ের কথা হল, গবেষণায় বেরিয়ে আসছে, এসব বরফের স্তরে স্তরে এখনো টিকে আছে আদিম সব ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ জীবাণু। যার বেশিরভাগই আধুনিক যুগের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে। মানুষের শরীরের রোগী প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ওইসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে পরিচিত নয়।
[৫] ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পৃথিবীতে টিকে থাকতে, কখনো আবার সম্পদ প্রাচুর্য কিংবা ভালো থাকার লোভে মানুষ প্রতিনিয়ত চুষে নিচ্ছে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য ভাণ্ডার। পাহাড় কাটছে, বন উজাড় করছে, খনি থেকে কয়লা, তেল, গ্যাস তুলে তা পুড়িয়ে মারাত্মক বায়ু দূষণ করছে; বাড়াচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
[৬] এই তো সেদিন পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন মানুষের লাগানো আগুনে পুড়েছে। আমাজনের সেই ক্ষত এখনো দগদগে। আর মানুষের ফুসফুস কুড়কুড়ে খাচ্ছে মরণঘাতি ভাইরাস- করোনা। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলছে। এখন নিশ্চিতভাবেই তা আরো বেড়েছে। এরিমধ্যে তারা অনেক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের অস্তিত্বের খোঁজ পেয়েছেন সেগুলো সুবিধাজনক পরিবেশ পেলে অর্থাৎ উঞ্ণতা আরেকটু বাড়লে প্রকৃতিতে ছড়াতে শুরু করবে। এসব ভাইরাসের অনেকগুলোই মহামারি ছড়াতে সক্ষম।
[৭] ফ্রান্সের এআইএক্স মার্সেই ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. জন মাইকেল ক্ল্যাভেরিয়ে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা প্রথমবারের চেষ্টাতেই ত্রিশ হাজার বছরের পুরনো সুপারভাইরাসকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছি। সেটা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যামিবাকে সংক্রমিত করতে পেরেছে। কিন্তু পারমাফ্রস্টের মধ্যে আরো কি কি ধরনের জীবাণু লুকিয়ে আছে তা আসলে আমরা জানি না। এটা অনুমান করাও সম্ভব না। সময় টিভি
আপনার মতামত লিখুন :