আরিফুল ইসলাম, সরাইল : [২] বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার নামাজে গণজমায়েত ঠেকাতে না পারার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটো, সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাসুদ রানা ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতর।
[৩] এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরো জেলা যখন লকডাউনে, সেই মূহুর্তে জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতির দায় এড়াচ্ছে সরাইল উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (২০ এপ্রিল) সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মো. মুসা গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার কাছে কোনো ধরনের তথ্য ছিল না। পুলিশের পক্ষ থেকেও আমাকে কিছু জানায়নি। অন্য কোনো মাধ্যম থেকেও জানিনি এতো বড় জমায়েত সেখানে হতে যাচ্ছে। জানাজা শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক পরে আমি জানতে পেরেছি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়নি।
[৪] অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উনারা (মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ) আমাদের বলেছিলেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সেটা তারা করেননি কেন? তা খতিয়ে দেখা হবে।
[৫] জানা গেছে, দেশ-বিদেশে সেই আলোচিত জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি নিয়ে যখন তীব্র আলোচনা-সমালোচনা বিদ্যমান, সেই মূহুর্তে সেখানকার লোক সমাগম নিয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের এসব বক্তব্যে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এ ঘটনার দায় স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। সকল দায় পুলিশের ওপর চাপানো ঠিক হচ্ছে না।
[৬] এ নিয়ে কথা বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের মহাজোটের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। তিনি বলেন, "হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহাম্মদ আনসারীর জানাজায় লকডাউন ভঙ্গ করা লাখো মানুষের সমাগমকে কেন্দ্র করে ব্যর্থতার দায় পুলিশের উপর চাপিয়ে দিয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন, দায় কি একা পুলিশের? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক এরা কি আঙ্গুল চুষছিলেন?
[৭] সাবেক এই এমপি আরও বলেন, যেকোন সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রাথমিক দায়িত্ব সিভিল প্রশাসনের। নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথমশ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। তাদের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করে পুলিশ তথা আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী। একজন প্রখ্যাত আলেমের মৃত্যুতে সারাদেশের ভক্ত অনুসারীরা এবং সারা দেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসবে, জানাজায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। এটা একটা ধর্মীয় আবেগের বিষয়। কিন্তু প্রশাসনের ক্ষেত্রে আবেগের কোন মূল্য আছে কি?
[৮] জিয়াউল হক মৃধা বলেন, আনসারী সাহেবের জানাজার ব্যাপারে সিভিল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মানুষের জীবন মরণ নিয়ে খেলা করার কোন অধিকার আছে কি উপজেলা প্রশাসনের ও জেলা প্রশাসনের?মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর আদেশ নির্দেশ অবজ্ঞা, অবহেলা করার সাহস কি করে পায় উপজেলা প্রশাসন/সিভিল প্রশাসন? ভবিষ্যতে এই ধরণের আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের উদ্যােগ ঠেকাতে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে সরাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসককে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মহাজোটর এই সাবেক সাংসদ।
আপনার মতামত লিখুন :