ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ছোট দুই সন্তান ও কোলের দুই মাসের এক বাচ্চাসহ কলাবাগানের একটি বাসায় ৬ মাস আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিলেন কুলসুমা খানম। তার স্বামী সেলিম ছোট একটি দোকানে ডাইনিং টেবিলের গ্লাসের কাজ করেন।
বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ঢোকার পর থেকেই অনেকের মতো কুলসুমের স্বামীও কর্মহীন। তিন সন্তানের ভরন-পোষণ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এজন্য গত মাসের বাসা ভাড়ার টাকা দিতে পারেননি কুলসুমা।
আর বাসা ভাড়ার টাকা সময়মতো দিতে না পারায় দুই মাসের শিশুসহ গত শনিবার তাদের বাসা থেকে বের করে দেয় ওই বাড়ির মালিক। তিন সন্তানসহ কোথায় যাবেন কুলসুম। তাই বার বার অনুরোধ করছিলেন বাড়িওয়ালীকে। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজ হয়নি। বাচ্চা কোলে নিয়েই বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ওই নারীকে।
তবে তিন দিন পরে পুলিশের সহায়তায় বাসায় ফিরতে পেরেছেন কুলসুম। আর সেই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, ওই ভাড়াটিয়ার দায়ের করা মামলায় এখন আসামি বাড়ির মালিক।
ভুক্তভোগী ওই পরিবার ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
[৩] বাসা লুটের নাটক সাজিয়ে ৯৯৯ ফোন
গত মাসের বাসা ভাড়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই কুলসুমকে চাপ দিচ্ছিলেন বাড়ির মালিক। কিন্তু ভাড়া না পেয়ে ১৮ এপ্রিল তাদের জোর করে বাসা থেকে বের দিতে চান বাড়িওয়ালী শম্পা বেগম।
এ জন্য বাসা লুটের নাটক সাজিয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ ফোন করেন বাড়িওয়ালী। তার ফোন পেয়ে দ্রুত সেই বাসায় যায় কলাবাগান থানা পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে যে, লুটপাটের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উল্টো বাসা থেকে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিচ্ছেন বাড়িওয়ালা। পরে ভাড়াটিয়াকে বাসা থেকে বের না করে দিতে ওই বাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করে পুলিশ।
কিন্তু এতেও বাড়িওয়ালা কুলসুমের পরিবারকে জোর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। দুই মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে বাধ্য হয়েই স্বামী সন্তানসহ বাসা থেকে রাস্তার নেমে পড়েন মা কুলসুমা খানম।
কুলসুম বেগম দৈনিক বলেন, ‘মাত্র এক মাসের বাসা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা এমন আচরণ করবেন তা ভাবতেও পারিনি। বাড়িওয়ালা তো আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাড়ার টাকার বিবাদে আমার ১০ বছরের সন্তানকে মারধরও করেছে বাড়িওয়ালী। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় তিন দিন পরে আজ আমরা আবার বাসায় আসতে পেরেছি।’
[৪] সেই পরিবারের পাশে এক মানবিক পুলিশ
ভুক্তভোগী ওই নারীর এমন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবুল হাসান। ২ মাসের বাচ্চাসহ বের করে দেওয়া সেই ভাড়াটিয়াকে তার বাসায় তুলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন এবং সেই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবুল হাসান বলেন, ‘ওই বাড়িওয়ালী ৯৯৯ ফোন করে জানায় তার বাসা লুট করা হচ্ছে। তাই দ্রুত সেই বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ গিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারে। এরপর ভাড়াটিয়াদের বাসা থেকে বের না করে দিতে ওই বাড়িওয়ালাকে অনুরোধও করা হয়। কিন্তু অনুরোধ উপেক্ষা করেও তারা বাসা থেকে বের করে দেয় বাড়িওয়ালা।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভুক্তোভোগী ওই পরিবারকে আমি নিজে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করছি। এরপর তাদের দায়ের করা মামলার ওই বাড়িওয়ালাকে আসামি করা হয়েছে। ওই বাড়িওয়ালী কুলসুমের এক সন্তানকে মারধর করেছে এবং তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কুলসুম।’
পরে আজ তাদের ওই বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসা হয়েছে। আর এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাড়িওয়ালী শম্পার মোবাইলে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।আমাদের সময়
আপনার মতামত লিখুন :