আশরাফ আহমেদ (হোসেনপুর প্রতিনিধি) : [২] নভেল করোনার সূক্ষ্মতিসূক্ষ অদৃশ্য অনুজীবের আক্রমণে পৃথিবীকে স্থবির এক মৃত্যু আতঙ্কিত জনপদে পরিণত করে তুলেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে গ্রহণ করছে নানান ধরনের পদক্ষেপ। কিন্তু কোন পদক্ষেপেই ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
[৩] তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অধিকতর পদক্ষেপ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তারই ফলশ্রুতিতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ,ব্যবসা-বাণিজ্য বিনোদন পার্ক, খেলার মাঠ ,অযথা ঘোরাফেরাসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন শিশুরা গৃহবন্দী হয়ে গেছে। দিনের বেশিভাগ সময় টিভি, মোবাইল গেমস, কার্টুন, কম্পিউটার দেখে সময় পার করছে তারা। চার দেয়ালের কক্ষে, বারান্দায় অথবা বাড়ির ছাদে টুকিটাকি চলছে শিশুদের খেলাধুলা। এতে প্রায়ই ঘটছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা কিংবা বাসার জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি। পরিবারের ভাইবোনে চলছে ঝগড়াঝাঁটি কিংবা দুষ্টামি। কখনো বা তাদের মনে আনন্দ উল্লাস অথবা কখনো মনে ভারাক্রান্ত ও বিষন্নতা। স্কুল-মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় নেই পরীক্ষা কিংবা পড়াশোনার চাপ। চার দেয়ালে বন্দী থাকতে থাকতে একঘেয়েমি চলে এসেছে মনে। ফলে শিশুদেরকে আর ঘরে রাখতে পারছেন না অভিভাবকেরা।ওদের দুষ্টামি আর চঞ্চলতায় অস্থির হয়ে উঠেছেন অভিভাবক।
[৪] হোসেনপুর শিশুর হাসি ফাউন্ডেশন এর সদস্য জুনায়েত রাব্বি প্রকাশ (১৪) বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মা-বাবা কোনমতেই বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তাই মনে খুব কষ্ট।
[৫] হোসেনপুর পাইলট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সিফাত (১১), মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র আবরার আহমেদ ত্বকি(১০) সহ অনেকেই বলেন,স্কুল-মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় বাসায় আর দিন কাটছে না। খেলাধুলা কিংবা কোথাও ঘুরে বেড়াতে যেতে পারছিনা।
[৫] হোসেনপুর সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সমাজকর্মের প্রভাষক শামসুন্নাহার বলেন, করোনার ভয়াবহতায় শিশুরা বাসায় অবস্থান করায় দুষ্টামি পূর্বে চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে এবং প্রায়ই অভিমান আর বিষন্নতায় ভুগছে। এদিকে স্কুল বন্ধ থাকায় ওদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত আছি।
[৬] আলতাফ গোলন্দাজ কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে শিশুরা একই স্থানে বসবাস করলে, কোন বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকলে তাদের মানসিক অস্থিরতা ও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
[৮] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই দুর্যোগ মুহূর্তে সন্তানদেরকে বাসায় বেশিক্ষণ ধরে টিভি, মোবাইল কম্পিউটার গেমস, কার্টুন দেখতে দেয়া যাবে না। ওদেরকে ছবি আঁকতে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে, বা মা-বাবা সময় দিয়ে আনন্দে রাখার পরামর্শ প্রদান করেছেন।
[৯]] কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনার প্রতিরোধে শিশুদেরকে ঘরে বিনোদনের ব্যবস্থা করে রাখাটা উচিত। তবে মোবাইল, টেলিভিশন , কম্পিউটার গেম, কার্টুনে অধিক সময় ধরে না দেখে সেদিকে অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সম্পাদনা : ইস্রাফিল হাওলাদার
আপনার মতামত লিখুন :