শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউন উপেক্ষা ‘তারা’ই কি ‘আমরা’, ‘আমরা’ই কি ‘তারা’?

রাশেদা রওনক খান : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউন উপেক্ষা করে জোবায়ের আনসারীর জানাজায় অংশ নেয় লাখো মানুষ, কিন্তু এই লকডাউনের মাঝে এতো লোক সমাগম কীভাবে হলো, কেন হলো, কী তাদের মাথায় কাজ করে, এতোটা অজ্ঞতা কীভাবে এখনো মানুষের ভেতরে থাকে ইত্যাদি জল্পনা কল্পনা চলছে ১৮ এপ্রিল সারাদিন ধরে। করোনার বিষাক্ত ভাইরাসে সারাবিশ্ব যখন আক্রান্ত, সারাবিশ্বে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে যখন দুনিয়ার সব বড় বড় আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, রাষ্ট্রীয় সম্মেলন, সব কিছু যখন কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে আছে, তখন আমাদের দেশের লাখো মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে একজনের জানাজা পড়তে ঘর থেকে বের হয়ে জনসমাগম করেছে। কী হাস্যকর ধর্মান্ধতা। এতোদিন ধরে সরকারের প্রশাসন ও বাহিনীগুলোর এতো সব আয়োজনকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে যেন বাংলাদেশকে পুরোপুরি হুমকির মাঝে ফেলে দিলো, সেদিন পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে যেমনটি হয়েছিলো আবারও এমনটিই হলো। ইংল্যান্ডে দুজনের বেশি একসঙ্গে কোথাও দেখা গেলে প্রয়োজনে তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, এই হুঁশিয়ারি দেওয়া আছে। রাষ্ট্রের আদেশ তাদের কাছে বাইবেলের মতো, আর আমাদের কাছে লুকোচুরি খেলা। যাই হোক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ঘটনা অনেক যুক্তি-তর্ক-গল্পের জন্ম দিয়েছে। যেমন : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিলো মুখরিত ধর্মের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতি আলোচনা-সমালোচনায়। কেউ কেউ সরকার দলীয় রাজনীতিবিদরা কেন দমাতে পারেনি সেই প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ বলেছেন, বিরোধী কোনো শক্তির এটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ পুলিশ বাহিনীর দিকে সোজা আঙুল তুলেছেন। গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই সোচ্চার ছিলো প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, চাইনিজদের মতো এখানেও বহির্বিশ্বের ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা। সব দেখে, শুনে, পড়ে ভাবছি, আসলে দোষটা কার? ভাবছি খুব একটা কি তফাৎ আছে ‘তাদের’ আর ‘আমাদের’ মাঝে? আমাদের প্রগতিশীল সমাজও কী করছে তা আমার এক ধানম-িবাসী বন্ধুর অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, ‘আমাদের বিল্ডিংয়ে ২৪টা ফ্ল্যাট, শিক্ষিত সচেতন লোকজন সব, মসজিদে যেতে পারবে না তাই কমিটির লোকজন পার্কিং প্লেসে তারাবি আয়োজন করছে, আমরা ২/৩ জন নিষেধ করায় মোটামুটি কাফের তকমা পেয়ে গেলাম’। জি এটাই আমরা, তা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি, কিংবা ধানম-ি/গুলশান-বারিধারা বা লন্ডন/ আমেরিকা থাকি, কিংবা চাঁদে যাই, তারাই আমরা, আমরাই তারা। তারা যৌথভাবে চলে বলে তাদের যৌথতা আমাদের চোখে পড়ে বেশি, তারা আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করে বলে আমাদের কানে বাজে বেশি, তাদের তখন আমরা ধর্মান্ধ, অশিক্ষিত, কুসংস্কারচ্ছন্ন বলি। আর আমরা শিক্ষিত বলে এক হতে পারি না, আমরা চিৎকার করি না বলে নিজেদের বলি, শিক্ষিত, প্রগতিশীল, উদার চিন্তুক ও আধুনিক। কিন্তু আসলেই কি আমরা তাই? কয়েকটা উদাহরণ দিই। লন্ডনে করোনা আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারগুলো যখন দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছে তখন কিছু সংখ্যক অসাধু বাংলাদেশি দোকান মালিকরা ৩ পাউন্ডের ‘হালাল মুরগি’ বিক্রি করছে ২০ পাউন্ডে। ‘হালালে’র নামে এই অধিক মুনাফা লাভের ব্যবসা, সেতো ধর্মের নামেই হচ্ছে। এই আমরাই এতোটা দুর্দিনেও নকল মাস্ক, পিপিই নিয়ে দুর্নীতি করছি। এই দুর্দিনেও এই সমাজের ধর্ষক নামক দানবেরা কি থেমে আছে? এই আমাদের মাঝেই আছে ত্রাণ চোর, আবার এই আমরাই কেউ একজন চুরি না করলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে ত্রাণ চোর বলে সমাজে হেয় করছি। এই আমরাই ধর্মের নামে গুজব রটিয়ে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি মানুষের কতো ক্ষতি করছি, এই আমরাই কতো নারীকে সাইবার ওয়ার্ল্ডে আক্রমণ করছি। এই আমরাই তো এই করোনায় দুর্দিনে রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে অন্ধ বিশ্বাসে এক হয়ে একদল আরেকদলের দিকে কাঁদা ছুড়তে এতো আগ্রহী। তাদের রাজনৈতিক অন্ধত্বের সঙ্গে আমাদের অন্ধত্বের তফাৎ কতোটুকু মাঝে মধ্যে পরিমাপ করতে পারি না। এই আমরাই ‘আধুনিক’ ‘প্রগতিশীল’ চাঁদে যাওয়ার মতো ‘স্মার্ট’ ভাবা মানুষজনও পৃথিবীর যেখানেই থাকি, এখনো সারাক্ষণ যেকোনো চিন্তা-যুক্তি-বুদ্ধি-লেখা-তর্ক-বিতর্ককে নিয়ে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এর মাঝেই আটকে ফেলি, গরুর নদীতে ফেলার সেই রচনা লেখার মতো, যেন এর বাইরে আমাদের কোনো পৃথিবী থাকতে পারে না, চিন্তা জগত তো প্রশ্নই উঠে না। এই আমরাই তারা যারা একইভাবে প্রতিদিন ঘুরতে, ফিরতে, ঠেলতে, ধাক্কাতে, হাওয়া খেতে, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি করে আনন্দ পাই। তাই কাকে দোষ দেওয়া যাবে, প্রশ্ন রইলো। আমার তো মনে হয় তারাই আমরা, আমরাই তারা। আসুন তারা ও আমরা সবাই মিলে অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হই, ঘরে থাকি, নিজেকে রক্ষা করি। তারা কী করছে, আর আমরা কী করছি এই তফাৎ নিয়ে ভাবতে থাকি আর এই যাত্রায় নিজেদের আপাতত রক্ষা করি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়