মৌরী সিদ্দিকা : [২] ‘ভিটামিন সি’ সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকায় না। রোগ হওয়ার পর তার প্রকোপ কম রাখতে সাহায্য করে। সাহায্য করে ভোগান্তির সময়কাল কমাতেও। কোভিড-১৯ এক ধরনের ফ্লু।
[৩] সাংহাই মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে চাইনিজ জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজ-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে যদি বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দেয়া যায়, শিরার মাধ্যমে তার ফুসফুসের কার্যকারিতা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে এবং এতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের(ভেন্টিলেটরের) প্রয়োজন কিছুটা কমতে পারে।
[৪] এক রিভিউ স্টাডি থেকে জানা যায়, ‘ভিটামিন সি’ কেয়ার ইউনিটে থাকার প্রয়োজনীয়তা ৮ শতাংশ কমাতে পারে, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮ শতাংশ। তবে সবই রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। অর্থাৎ, ভিটামিন সি দিয়ে চিকিৎসা করলে আদতে কতটা কাজ হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে তা নিয়ে।
[৫] একটি সমীক্ষা বলছে, শিরার মধ্য দিয়ে বেশি মাত্রায় ‘ভিটামিন সি’ দিলে সোয়াইন ফ্লু ও অন্য আরও কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে যে প্রদাহ হয় তার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। এটিও রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। অর্থাৎ, পশুর পর এখন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে এর ভালমন্দ যাচাই করা হচ্ছে। তবে কোভিডের ক্ষেত্রেও সে একই ভাবে কাজ করবে কিনা সে গবেষণা এখনও সে ভাবে হয়নি।
[৬] কাজেই এ রকম পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়ার কোনও যুক্তি নেই। কারণ খেয়াল করলে দেখা যাবে, গবেষণাপত্রে খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে শিরার মাধ্যমে দেয়ার। সেটিও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে। কাজেই ভিটামিন সি অবশ্যই খাবেন। তবে মাপমতো। বেশি খেলে ইউরিনের মধ্যে দিয়ে তা বেরিয়ে যাবে। উল্টে পেট খারাপ হতে পারে।
[৭] সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার। ধূমপায়ী হলে বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে আরও ৩০-৩৫ মি.গ্রা প্রয়োজন। মাঝারি একটা কমলালেবু খেলেই প্রয়োজনের ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এককাপ রান্না করা ব্রকোলি খেলে পাওয়া যায় প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি প্রায় ১১০ শতাংশ। অন্য শাক-সব্জি-ফলও থাকে দৈনন্দিন খাবার তালিকায়। ‘ভিটামিন সি’ আছে সবগুলোতেই। ছোট্ট একটা হিসেব, ভাতের পাতে স্রেফ একটা কাঁচা লঙ্কা খান, পাবেন ১২১ শতাংশ। একটা পেয়ারা খেলে পাবেন ১৪০ শতাংশ, আধকাপ হলুপ বেলপেপার দেবে ১৫২ শতাংশ। সকালে খালিপেটে পাতিলেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সারা দিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ, ওখান থেকেই চলে আসবে। কাজেই ভিটামিন সি নিয়ে আলাদা করে ভাবার দরকার নেই। ওটুকুতেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অটুট থাকবে, যার সাহায্যে এই দুর্দিনে লড়াই চালাবেন আপনি। কম থাকবে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা। সঙ্গে থাকছে স্বাস্থ্যবান ত্বক ও চুল। সূত্র : আনন্দবাজার
আপনার মতামত লিখুন :