শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনা সংকটের আর্থ-সামাজিক বিষয়ে তিনটা প্রবণতা সুস্পষ্ট

ডা. সেলিম জাহান : না করোনা সম্পর্কে ‘কেউ কিছ বলতে পারে না’। এর সংক্রমণের ব্যাপারে আমরা কিছু কিছু জানি, সবটা জানি না, এর প্রতিকার বিষয়ে কিছু কিছু জ্ঞান আমাদের আছে, তবে পুরোটা নয়। এই ঘাটতি শুধু সাধারণ মানুষের নয়Ñ চিকিৎসক, গবেষক, বিশেষজ্ঞ সবারই প্রায় একই অবস্থা। তাই একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, একটা কথাই সত্যিÑ আসলে করোনার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে কোনো বিশেষজ্ঞই বিশেষজ্ঞ নয়। আর আমি বলি, এ ক্ষেত্রে আসলে আমরা সবাই ‘বিশেষভাবে অজ্ঞ’। বর্তমানে সারাবিশ্ব যখন করোনা সামলাতে ব্যতিব্যস্তÑ সংক্রমণ রোধে ও মৃত্যু ঠেকাতে, তখন নানা তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের কোনো সময় নেই এবং এটা এ মুহূর্তে অগ্রাধিকারও পাবে না। কেউ এখন বলতে পারবেন না যারা সংক্রমিত, যারা হাসপাতালে চিকিৎসারত কিংবা যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন, তারা সমাজের কোন জায়গা থেকে এসেছেন, কোন আয়-স্তরের মানুষ তারা, শিক্ষাগত অর্জন সেখানে কোনো তারতম্য করে কিনা ইত্যাদি। আগামীতে কোনো একদিন এসব প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত লভ্য হবে এবং তখন গবেষকদের কাজের মাধ্যমে করোনা সংকটের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটটি সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে। তবে নানা বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও বর্তমান অবস্থায় করোনা সংকটের আর্থ-সামাজিক বিষয়ে তিনটা প্রবণতা সুস্পষ্ট। এক. যারা বিশেষ কতোগুলো রোগ। যেমন : ক্যান্সার, হৃদরোগ, প্রমেহ, হাঁপানি ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, করোনা মৃত্যুর মূল শিকার তারা। দুই. করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে পুরুষের চেয়ে নারীর এবং তরুণদের চেয়ে বৃদ্ধদের অনুপাত বেশি এবং তিন. জাতিগত বা বর্ণগত সংখ্যালঘুদের অনুপাত করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে অন্যদের চেয়ে বেশি। প্রথম প্রবণতা স্বব্যাখিত। যে সব রোগের কথা বলা হয়েছে, তাতে যারা ভুগছেন, সে সব জনগোষ্ঠীর যে কোনো জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তারাই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর মূল শিকার হয়েছেন।
দ্বিতীয় প্রবণতা সম্পর্কে কিছুটা বলা প্রয়োজন। নারীর তুলনায় পুরুষেরা করোনা মৃত্যুর মূল শিকার। চীনের ৩,৫০০ করোনা মৃত্যুর মধ্যে ৬৪ শতাংশ পুরুষ, আর ৩৬ শতাংশ নারী। ব্রিটেনে এ পর্যন্ত করোনা মৃত্যুর ৭০ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ শতাংশ নারী। অর্থাৎ পুরুষের মৃত্যুর হার নারীর দ্বিগুণ। এর কারণ বিবিধ। নারীর একটি জৈবিক শারীরিক সুঅবস্থা আছে, যার কারণে নারীর প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি। সেইসঙ্গে ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রকোপ পুরুষের মাঝে বেশি, সুস্বাস্থ্য অভ্যাস পুরুষের চেয়ে নারীর ভালো, এবং হৃদরোগ বা প্রমেহের মতো রোগের আপাতন পুরুষের চেয়ে নারীর মধ্যে কম। যেকোনো জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বয়োবৃদ্ধদের কম তরুণদের চেয়ে। করোনাও তার ব্যত্যয় নয়। ফলে করোনা মৃত্যুহার বয়োবৃদ্ধদের চেয়ে বেশি। তৃতীয় প্রবণতায় আসি। যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে যে প্রতি চারজন করোনা সংক্রমিত মানুষের একজন কৃষ্ণাঙ্গ। ব্রিটেনেও এ জাতীয় প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। হয়তো আগামী সময়ে যখন অন্যান্য দেশের উপাত্ত লভ্য হবে, তখন হয়তো দেখা যাবে যে, সংখ্যালঘুরাই সংক্রমিত হয়েছিলেন বেশি এবং মৃত্যুর আপাতনও তাদের মাঝেই বেশি ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে উচ্চতর সংক্রমণের কারণের কিছু কিছু কাঠামোগত এবং কিছু কিছু প্রায়োগিক। কাঠামোগত দিক থেকে বিচার করলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিক দিক থেকেই দরিদ্র, বঞ্চিত ও অসমতার শিকার। তারা স্বল্প শিক্ষিত, তাদের পুষ্টির অভাব রয়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান নি¤œ। ন্যূনতম সামাজিক সুবিধাও তাদের কাছে লভ্য নয়। সুতরাং কাঠামোগত দিক থেকে তারা যে কোনো সংকট ভঙ্গুর। সেইসঙ্গে প্রায়োগিক অনেক কারণও এর সঙ্গে যুক্ত। কৃষ্ণাঙ্গরা বেশিরভাগই কর্ম-মইয়ের নিচের দিকে অবস্থান করেন। এর ফলে একদিকে যেমন তাদের সঞ্চয় কম, অন্যদিকে কাজের জন্য তাদের ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের জীবনযাত্রা প্রণালীর প্রকৃতির কারণেও ঘরের মধ্যে সামাজিক জনদূরত্ব বজায় রাখা তাদের জন্য কষ্টকর। তারা যে সব অঞ্চলে বসবাস করেন, সেখানে স্বাস্থ্য সুবিধা ও সেবাও সীমিত। এ সব প্রায়োগিক কারণেও তাদের করোনা-ভঙ্গুরতা বেশি। সুতরাং কাঠামোগত ও প্রায়োগিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে করোনার আপাতন ও মৃত্যুর হার বেশি। শেষের কথা বলি, সারাবিশ্বেই দেখা যাচ্ছে যে করোনা শিশুদের তেমন একটা স্পর্শ করছে না। কী আছে শিশুদের যে তারা করোনাকে এড়িয়ে চলছে? এ মুহূর্তে এর কোনো উত্তর নেই। কোনো একদিন হয়তো এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমার একটি পরম তৃপ্তি সেখানেই যে আমাদের অহরহ শিশু সংক্রমণ ও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়