শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:০০ দুপুর
আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] প্রতি ইঞ্চি মাটি কাজে লাগান : ব্যারিস্টার সুমন

জাগো নিউজ : [২] করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি কাজে লাগানো এবং চাল চোর ও ত্রাণ চোরদের বহিষ্কার করে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে ঠাঁই না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও হবিগঞ্জ সদরের সংসদ সদস্য আবু জহির। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল ) ফেসবুক লাইভে এসে দেশবাসী এবং দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী ও জাতীয় সংসদের এই এমপি।

[৩] ফেসবুক লাইভে এসে সুমন বলেন, যিনি পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু তার নামে শুরু করছি। আমি আজ আমার বাড়ির পাশে একটি খোলা মাঠে এসেছি। আপনারা স্বভাবত দেখতে পাচ্ছেন আমি একটি ক্ষেতে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমার একটি ধারণা এটা হতে পারে নাও হতে পারে। করোনা আমাদের যত মানুষকে মারবে তার থেকে বেশি আমরা অভাবের কারণে মারা যেতে পারি।

তিনি বলেন, এত লম্বা সময় যদি আমরা লকডাউনে থাকি তাহলে আমাদের মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যারা আমাদের এই অভাব থেকে রক্ষা করতে পারেন, তাদের মধ্যে বহু মানুষের কথা বলা যেতে পারে। তাদের মধ্যে সরকারও বড় ভূমিকা রাখছেন।

তিনি বলেন, তবে যারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে তা হচ্ছে এই মাটি। আমি আমার লাইভে এটা দেখাতে চাচ্ছি যে মাটি ব্যবহার করে আপনারা যদি ফসল ফলাতে পারেন তাহলেই একমাত্র আপনারা বাঁচতে পারবেন, এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

[৪] ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যে ইন্ডিয়ার ওপর আমরা সারাক্ষণ নির্ভর করেছিলাম, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম। এখন ইন্ডিয়ার অবস্থাই বারোটা বেজে গেছে। ইন্ডিয়া যদি এখন এক্সপোর্ট বন্ধ করে দেয়, খাবার বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের পকেটে টাকা থাকলেও আমরা খাবার কিনে খেতে পারব না। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যেন দেশের কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও খালি না থাকে।

তিনি বলেন, আমি নিজে লকডাউনে আছি। প্রয়োজনে আমি একা মাঠে গিয়ে কাজ করলে ভাইরাসের কোনো ভয় নেই। আমি নিজে ধান কাটতে পারি। এই সময় যদি বোরো ধান ঘরে তোলা যায় তাহলে এই সময়ে অন্তত কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না দেশে।

[৫] বোরো ধান কাটার বিষয়ে সুমন বলেন, এখন তো ধান কাটতে কামলার দরকার নেই, আমরা নিজেরাই কামলা। এই বছরে তিনটি ফসল আউশ, আমন, বোরো, যেন আমরা ঘরে তুলতে পারি। এ জন্য নিজেদের পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করব। কামলার প্রয়োজন নেই।

আউশ, আমন ও বোরো এই তিন ফসল ঘরে তোলার কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে লাইভে যোগ দেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জহির। তিনি ব্যারিস্টার সুমনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সুমন তাকে বলেন, আপনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদেরকে যেভাবে ত্রাণ দিচ্ছেন, আর কোনো এমপিকে এভাবে পরিশ্রম করতে দেখা যায় না এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

[৬] ব্যারিস্টার সুমন এই এমপিকে প্রশ্ন করে বলেন, আমরা একটি ক্রাইসিস মুহূর্তে আছি এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? সুমনের প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, শুধু আমরা না সারা পৃথিবীর মানুষ এই ক্রাইসিসে। আর এই ক্রাইসিসটা হলো করোনাভাইরাস মহামারি। ভাইরাসটা শুধু বাংলাদেশে বা হবিগঞ্জে না, সারাবিশ্ব এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এর আগে এ রোগের সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটা একটি যুদ্ধ। যুদ্ধটা হলো ঘরে থাকা, নিরাপদে থাকা, মানুষকে নিরাপদ রাখা। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে ঘরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা দীর্ঘ দেড় মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছি হাটে-মাঠে-ঘাটে। সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে।

[৭] সুমন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে এ হবিগঞ্জ এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন ধানকাটা নিয়ে বিপাকে পড়বে কৃষকরা। তাই ব্যারিস্টার সুমন হবিগঞ্জের হোয়াই নগরে ধান কাটার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি কী জানতে চান সংসদ সদস্যদের কাছে।

এমপি আবু জহির ধান কাটার বিষয়ে বলেন, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিষ্কার করে বলেছেন, কৃষকের ব্যাপারে আমাদের সাধারণ ছুটি নেই। ইতোমধ্যে আমি ফেসবুকে ধান কাটার বিষয়ে অবগত করেছি। তাদেরকে বলেছি, আমাদের এলাকায় আগাম বন্যা হতে পারে। নিচু জমির ফসল যেন কৃষকরা কেটে নিয়ে যায়।

সংসদ সদস্য বলেন, এরপরেও আমাদের দেশে ফসলের বাইরে যেন এক ইঞ্চি জমিও পতিত না থাকে। আমার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার দুই হাজার কৃষকের হাতে আউশ প্রণোদনা হিসেবে সার এবং বীজ তুলে দিয়েছি।

[৮] সুমন দেশে ত্রাণ এবং চাল চুরির বিষয়ে বলেন, এরকম দুর্যোগের মুভমেন্টেও সারা বাংলাদেশে চাল চুরির ঘটনা ঘটছে। চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এর সঙ্গে জড়িত আছেন।

আবু জহির তখন বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। চাল চোর কখনো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগ হতে পারে না। এরা যে পর্যায়ের হোক তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জেলার সব নেতাকর্মীদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগে তাদের স্থান নেই। আমাদের হবিগঞ্জে যদি আওয়ামী পরিবারে চোর থাকে তাহলে তাকে দল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।

[৯] লাইভের শেষে সুমন বলেন, আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিজের পায়ের তলায় যদি মাটি থাকে, তাহলে আপনাকে কেউ ভূপাতিত করতে পারবে না। আমাদের পায়ের নিচে মাটি আছে। ইভেন সৌদি আরব থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে ও আমেরিকাতেও নিজেরা ফসল ফলাতে পারে না।

সুমন বলেন, আমাদের উর্বর মাটি আছে, চাইলে এখন নিজেরা নিজেকে সাহায্য করতে পারি, ফসল ফলাতে পারি।
আপনারা ঘরে থাকেন আর মাঠে এসে কাজ করেন। এক ইঞ্চি মাটিও যেন আমরা ফেলে না রাখি, এই মাটিকে আমরা কাজে লাগাই।

[১০] সুমন বলেন, দেখবেন আমরা নিজেরা যদি দাঁড়িয়ে যাই তাহলে কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। ভাইরাসের কারণে যদি আমরা মারা যাই তাতে কিছু হবে না। কিন্তু ভাইরাস আসার আগে যদি আমরা না খেয়ে মারা যাই, মরার আগে যদি আমরা না খেয়ে মারা যাই তাহলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে যাব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়