শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] নজরদারিতে চেয়ারম্যান মেম্বাররা

দেশ রূপান্তর : [২] চলমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন সরকার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে, ঠিক এই মুহূর্তেই সরকারি চাল ও ত্রাণ আত্মসাৎ করছে একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভিজিএফ-ভিজিডি, ওএমএস এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা, জেলেদের জন্য খাদ্যএসব কর্মসূচির প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রেই অনিয়ম আর চুরির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই দুর্যোগকালে এ ধরনের ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা করোনাভাইরাসের আলোচনা ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এমন পর্যায়ে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়েছে কঠোর অবস্থান। অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত জনপ্রতিনিধিদের ধরতে মাঠে নামানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে সরকারের বিভিনড়ব গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছে তৎপর। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা সদস্যের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে ফৌজদারি ব্যবস্থা; স্থানীয় সরকার বিভাগের এমন ঘোষণার পর গত দুই-তিন দিনে মোট ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

[৩] জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভিজিএফ-ভিজিডি, ওএমএস, হতদরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা, জেলেদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি নামে কয়েকটি ধাপে চাল ও অন্যান্য ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মূলত ভিজিডি ও জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই সরকারি এসব ত্রাণ ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাচ্ছি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এরই মধ্যে বেশকিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে এসব এলাকায় আবার নতুন করে নির্বাচন দেওয়া হবে।’

[৪] স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রান্তিক, দুস্থ গরিব শ্রেণির মানুষকে সহায়তার ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উনড়বয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। গত ১১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন শাখার উপসচিব মো. এরশাদুল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে শহর ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিভিনড়ব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ কার্যক্রম, যেমন চাল, নগদ অর্থ, শিশুখাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করছে।

[৫] এতে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তৃণমূল পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু বিভিনড়ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে, কোথাও কোথাও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এরূপ অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজুসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণকে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

[৬] কর্মকর্তারা জানান, এ আদেশের পর গত দুই-তিন দিনে মোট ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

[৭] এর মধ্যে গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৪ জন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ৫ জন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

[৮] সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান হলেন পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কোরবান আলী, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু, বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১নং আন্দারমানিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইউপি সদস্যরা হলেন কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুল মানড়বান মোল্লা, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেকান্দার মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহেল মিয়া, ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ১নং বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মুহাম্মদ ওমর এবং একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়াডের সদস্য মো. জুয়েল মিয়া।

[৯] স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তারা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকার থেকে দেওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ অথবা ভিজিডির চাল আত্মসাৎ অথবা জাটকা আহরণ বিরত থাকা জেলেদের জন্য সরকার থেকে দেওয়া প্রদত্ত খাদ্যশস্য বিতরণ না করে আত্মসাতের কারণে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন অথবা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

একই সময় পৃক পৃক কারণ দর্শানো নোটিসে কেন চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্র পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

[১০] জানতেই চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিভিনড়ব মাধ্যমে উঠে আসা ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে মন্ত্রাণালয় আরও বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যার বিরুদ্ধে সরকারি চাল ও অন্যান্য ত্রাণ বিতরণে অভিযোগ উঠবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত গত দুই-তিন দিনে জেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে মোট ১২ জন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি চলমান থাকবে।’

তিনি বলেন, উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সময় কারণ দর্শানো নোটিসে কেন চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

[১১] জেলা প্রশাসকরা জানান, ৬৪ জেলায় বিশেষ মানবিক সহায়তা হিসেবে সরকার ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ হাজার ৪০০ টন চাল, ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্য কেনা বাবদ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এসব প্রকল্পের চাল ও ত্রাণ নানাভাবে চুরি করা হচ্ছে। ওজনে কম দেওয়া, তালিকা অনুযায়ী না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া, গায়েবি লোকজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে সেখান থেকে একাংশ নিয়ে নেওয়ার মতো কাজ করছে কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এই মুহূর্তে সরকারি ত্রাণ ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে।

[১২] জেলা পর্যায়ের অফিস প্রধান ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিনড়ব কর্মকর্তাকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আলাদা স্বেচ্ছাসেবী সদস্য। উপজেলা পর্যায়ে সমবায় কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সাব-রেজিস্ট্রার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প উনড়বয়ন কর্মকর্তাসহ ৩০-৩২ কর্মকর্তাকে এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে। তারা এলাকাভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম দেখভাল করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা জেলায় দায়িত্বরত গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আক্রমণের পর সম্প্রতি সরকার আমাদের ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত করে অফিস আদেশ জারি করেছে। জেলা পর্যায়ের প্রায় সব দপ্তর প্রধান এ কাজের সঙ্গে আছে।’

[১৩] পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিরতণে জেলা প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখছি। যেখানেই সরকারি চাল বা অন্যান্য ত্রাণ বিতরণে আমরা অনিয়মে অভিযোগ পাচ্ছি সেখানে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আর যদি অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর তারা পরবর্তী আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়