শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:০১ সকাল
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] করোনার প্রভাবে দেশের অর্ধকোটি লোক গরিব হতে পারে

আবুল বাশার নূরু : [২] করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে । সবকিছু বন্ধ থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের পাঁচ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা লাখ লাখ নারী-পুরুষ আবারও গরিব হয়ে যেতে পারেন। কারণ, বেকার হয়ে গেলে কিংবা ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে তারা আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবেন। এমন ঝুঁকিতে আছেন দেশের প্রায় অর্ধকোটি লোক। বিপুল এ জনগোষ্ঠী বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে রয়েছে। ফলে করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যেতে পারে।

[৩]গত মাসে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২৬ এপ্রিল থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। দফায় দফায় বাড়িয়ে এ ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পরিবহনশ্রমিক, রিকশাচালক, দিনমজুর, হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, ছোট দোকানদার। আর নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই রয়েছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়।

[৪] অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেল। এত দিন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যার কারণে মানুষের গরিব হওয়ার শঙ্কা ছিল। করোনা পরিস্থিতি এখন দেশের সব খাতেই প্রভাব ফেলছে। তবে অনানুষ্ঠানিক খাতে এর প্রভাব বেশি, এরই মধ্যে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

[৫] জাহিদ হোসেন একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সামনে বোরো মৌসুম। শহর থেকে যেসব লোক গ্রামে গেছেন, তাদের অনেকেই কাজের জন্য কৃষি শ্রমবাজারে ঢুকবেন। ফলে কৃষিশ্রমের বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি শ্রমিক পাওয়া যাবে, যা মজুরি কমিয়ে দেবে।

[৬] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৯ সাল শেষে বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। অতিদারিদ্র্যের হার সাড়ে ১০ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশে ৩ কোটি ৪০ লাখ গরিব মানুষ আছে। তাদের মধ্যে পৌনে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র।

[৭] অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হলে সব সময়ই কিছু লোকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। এতে তারা বেকার হন এবং আবার গরিব হয়ে যান। এমন বিবেচনায় ২০১৫ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সামাজিক নিরাপত্তাকৌশল প্রণয়ন করার সময় ঝুঁকিতে থাকা মানুষের হিসাব করেছে। ওই কৌশলপত্রে বলা হয়, দেশে যত গরিব মানুষ আছে, তাদের ২৫ শতাংশের সমান মানুষ দারিদ্র্যসীমার আশপাশে থাকে। তাদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ অর্থনীতি ভালো থাকলে, আয়-রোজগার ভালো হলে দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করে। আবার বাকি সাড়ে ১২ শতাংশ মানুষ, যারা দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকে, তারা অর্থনীতি খারাপ হলে কিংবা ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম বাড়লে আবার গরিব হয়ে যায়। এবারের করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ওই শ্রেণির মানুষ। জিইডির ওই হিসাবটি ধরলে দেশে এখন গরিব মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৪০ লাখ। তাদের মধ্যে আবার গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে আছে সাড়ে ৪২ লাখ মানুষ।

[৮] বাংলাদেশে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় পদ্ধতি দিয়ে দারিদ্র্য মাপা হয়। এ দেশের একজন নাগরিক দৈনিক ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাবার গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় আয় করতে না পারলে তাকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। আর দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ ক্যালরি খাবার গ্রহণের মতো আয় না থাকলে হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাহলে এই ক্যালরি খাবার কিনতে কত টাকা আয় করতে হবে, সেই হিসাবও আছে। সামাজিক নিরাপত্তাকৌশল প্রণয়নের সময় জিইডি একটি হিসাব করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারের আয় যদি মাসে ৬ হাজার ৪০০ টাকা হয়, তাহলে ওই পরিবারের সবার জন্য দৈনিক কমপক্ষে ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাবার কেনা সম্ভব হবে। আর একটি পরিবারের আয় যদি ৫ হাজারর ২০০ টাকা হয়, তাহলে তারা ১ হাজার ৮০৫ ক্যালরি খাবার কিনতে পারবে।

[৯] পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ৪০-৪২ লাখ মানুষ আবার গরিব হয়ে যেতে পারে। তাই এবার গরিব হওয়ার সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে। কারণ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সবকিছুই বন্ধ আছে।

[১০] বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশই দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বিশ্বব্যাংক ব্যক্তিগত আয়ের ভিত্তিতে দারিদ্র্য পরিমাপ করে। দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম আয় করলে ওই ব্যক্তিকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়