স্বকৃত নোমান : সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয়চিহ্ন। স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ছাড়া কোনো জাতি তার জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। জাতিসত্তাহীন মানুষ কচুরিপানা কিংবা পরগাছার মতো উন্মূল। একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং জাতির মানস গঠনে সংস্কৃতি পালন করে অগ্রণী ভূমিকা। বাঙালি সংস্কৃতির বিস্তর অনুষঙ্গের মধ্যে পয়লা বৈশাখ একটি। আমরা যদি নিজেদের বাঙালি দাবি করি, তবে পয়লা বৈশাখই আমাদের প্রধান উৎসব। পয়লা বৈশাখকেন্দ্রিক আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তিটা এ দেশের রাজনীতিবিদরা টের পায়নি, অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী টের পায়নি, সাধারণ মানুষ তো নয়ই। কিন্তু ঠিকই টের পেয়েছিলো বাঙালিবিরোধী অপশক্তি। সে কারণেই তারা হামলা করেছিলো রমনা অশ্বত্থমূলের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে। শুধু পয়লা বৈশাখ নয়, বাঙালি সংস্কৃতির যতো অনুষঙ্গ আছেÑ যেমন জারি-সারি-ভাটিয়ালি-মুর্শেদি প্রভৃতি গানকে বাঙালিবিরোধী অপশক্তিটি শত্রুজ্ঞান করে। যাত্রাপালা, পালাগানকে তারা শত্রুজ্ঞান করে। এ কারণেই শরিয়ত বয়াতী কিংবা রীতি দেওয়ানের মতো সংস্কৃতিসেবীদের তারা টার্গেট করে। একই কারণে তারা লালন-হাছন-রাধারমণ-শাহ আবদুল করিম প্রমুখ সংস্কৃতিস্তম্ভ ও তাদের ভাবধারাকে এদেশ থেকে নির্মূল করতে চায়। সহজিয়া পীর-ফকির-আউল-বাউল এবং তাদের ভাবাদর্শকে উচ্ছেদ করতে চায়। কিন্তু পারবে না। যতোদিন বাঙালি সংস্কৃতি প্রবহমান থাকবে ততোদিন তারা কিছুই করতে পারবে না।
আমরা যখন এক বৈশ্বিক মহামারীর সঙ্গে লড়ছি, তখন আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে পয়লা বৈশাখ, আমাদের প্রধান উৎসব। সম্মিলিতভাবে আমরা এ উৎসবে মেতে উঠার কথা ছিলো। কিন্তু সময় আমাদের প্রতিকূলে। মহামারী থমকে দিয়েছে আমাদের জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহ। আমরা এখন উৎসবহীন। তবুও হে বৈশাখ, তোমাকে স্বাগতম। এই উৎসবের দিনে রবীন্দ্রনাথের বাণী সত্য হয়ে উঠুকÑ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। সব আবর্জনা, সব দুর্যোগ, সব মারী ধুয়েমুছে যাক। দুষ্কালকে পেছনে রেখে আমরা আবার নবজীবনের দিকে যাত্রা শুরু করবোই। সবাইকে চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :