আবুল বাশার নূরু : (২) ভারত জুড়ে লকডাউনের মধ্যে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনদিনে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গ্রামের বাড়ি পৌছলেন ছত্তিশগড় সশস্ত্র বাহিনীর (সিএএফ) জওয়ান সন্তোষ যাদব (৩০)। বিজাপুরের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে উত্তরপ্রদেশের শিখর গ্রামে পৌঁছতে ট্রাক, পণ্যবাহী ট্রেন, নৌকা— কিছুই বাদ যায়নি। সন্তোষ জানিয়েছেন, দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী থাকেন উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর গ্রামে। বিবাহিত বোন এবং ছোট ভাই থাকেন মুম্বইয়ে। এই লকডাউনের মধ্যে তাঁদের পক্ষে মুম্বাই থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই, বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে করেই হোক তাঁকে যেতেই হতো। তাই পথের কষ্টটা আর তাঁর গায়ে লাগেনি।দৈনিক বর্তমান
সন্তোষ সিএএফে যোগ দেন ২০০৯ সালে। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পঞ্চদশ ব্যাটালিয়নে। বিজাপুর জেলার উপকণ্ঠে থাকা বাহিনীর শিবিরে ৪ এপ্রিল বাবার ফোন পান সন্তোষ। জানতে পারেন মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁর পরামর্শ মতোই পরের দিন মাকে বারাণসীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, বিকেলেই মায়ের মৃত্যুসংবাদ আসে। এরপরই স্থির করেন তাঁকে বাড়িতে যেতেই হবে। ছুটির অনুমতি মিলতেই ৭ এপ্রিল সকালে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়েন। সন্তোষ বলেছেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল যে করেই হোক রায়পুরে পৌঁছনো। কারণ, তারপর কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে, সেই বিশ্বাস আমার ছিল।’ সেই মতো একটা ধানের লরিতে চড়ে বিজাপুর থেকে চলে আসেন জগদলপুরে। সেখানে ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষার পর একটা মিনি ট্রাকে লিফট নিয়ে পৌঁছন রায়পুর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে কোন্দাগাঁওয়ে।
সন্তোষ জানিয়েছেন, ‘কোন্দাগাঁওয়ে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা আমাকে আটকান। ভাগ্য ভালো, সেখানে আমার পরিচিত এক পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁর সহায়তায় ওষুধের একটা গাড়িতে করে আমি চলে যাই রায়পুরে। এরপর আরপিএফে কর্মরত এক বন্ধুর সাহায্যে একটি পণ্যবাহী ট্রেনে উঠে পড়ি। অন্তত আটবার পণ্যবাহী ট্রেন বদলে ১০ এপ্রিল সকালে পৌঁছই আমাদের গ্রামের নিকটবর্তী স্টেশন চুনারে। এর জন্য রেলে কর্মরত আমার বন্ধু এবং সব স্টেশন মাস্টারের কাছে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। কারণ, ওঁদের সাহায্য ছাড়া এভাবে চুনারে পৌঁছনো সম্ভব হতো না।’ এখানেই শেষ নয়। এরপর চুনার স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে সন্তোষ পৌঁছন গঙ্গার পাড়ে। সেখান থেকে নৌকায় নিজের গ্রামে। তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে এই যাত্রাপথে একাধিক জায়গায় পুলিশ তাঁর পথ আটকেছে। কিন্তু, সব জানার পর মানবিকতার খাতিরেই তাঁকে এগিয়ে যেতে তারা সাহায্য করেছে। সন্তোষ বলছিলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে ৭৮ জন রেলে কাজ করেন। আমি জানতাম, এঁদের সাহায্য আমার কাজে লাগবেই। সম্পাদনা : রাশিদ
আপনার মতামত লিখুন :