শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:২৬ সকাল
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইতালিয়ান মাফিয়াদের মানবতা ও আমাদের চাল চোর পাণ্ডাদের দৌরাত্ম্য

যুগান্তর : মাফিয়া শব্দটি শুনলেই প্রথমে শরীরটা শিউরে উঠে। অবৈধ এমন কাজ নেই যা মাফিয়ারা করে না। মাফিয়া মানেই অন্ধকার জগত। অথচ এই মাফিয়ারাই করোনা কবলিত ইতালিতে দরিদ্র মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা খাদ্য, প্রয়োজনীয় পণ্য এমনকি নগদ টাকা দিয়েও সাহায্য করছে মানুষদের।

অর্থাৎ এমন বিপদের দিনে তারাও অন্ধকার থেকে আলোর জগতে উঠে এসেছে। যারা মানুষকে লুটে নিতো, তারা মানুষকে এখন বিলিয়ে দিচ্ছে। এর বিপরীতে আমাদের দেশের চিত্রটা কী? হাজারো বস্তা ত্রাণের চাল চুরির খবর গণমাধ্যম জুড়ে। এমন বিপদের দিনে, যেখানে মানুষ রোগ এবং ক্ষুধা দুটোর সামনেই দাঁড়িয়ে। এ দুটোই মৃত্যুর উপসর্গ।

মানুষের দুয়ারে করোনা আর অভাব দুটোই মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। এ অবস্থাতেও চাল চুরি চলছে। ইতালির মাফিয়ারা নস্যি আমাদের এই চাল চোরদের কাছে। মাফিয়াদেরও মানবিকতা আছে, এই চাল চোরদের নেই। মানবিকতার প্রশ্নে আরেকটি কথা বলি। এদেশে এক শ্রেণির সামাজিক পাণ্ডা গজিয়েছে। এরা সব সময়ই গজায়। যেকোন সময়ে গায়ের জোরে সামাজিক পাহারাদার হয়ে উঠে। এরা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে পিটায় পরকীয়ার অপরাধে। মোবাইল চুরির অপরাধে বালককে পিটিয়ে মেরে ফেলে। একঘরে করার ফরমান জারি করে।

এই সামাজিক পাণ্ডারাই আজ করোনা আক্রান্ত রোগীকে অস্পৃশ্য ঘোষণা করছে। অস্পৃশ্য বলছে সেই আক্রান্তের পরিবারকে। ফলে একদিকে যেমন পরিবারটি রোগে আক্রান্ত, অন্যদিকে আক্রান্ত হচ্ছে চিকিৎসা ও খাদ্য না পাওয়ার শোকে। সামাজিক পাণ্ডাদের জ্বালায় তাদের জীবন হয়ে উঠছে বিষময়। করোনা আক্রান্ত হবার দরকার নেই; সন্দেহেই সামাজিক এসব পাণ্ডা বলছে এলাকা ছেড়ে যেতে। না গেলে বাড়ি-ঘরে হামলা হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সে বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা। আর মারা গেলে তো কথাই নেই। লাশ কবর দিতে দেয়া হচ্ছে না।

একটা খবর নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে সবার, করোনা আক্রান্ত মেয়ের লাশ নিয়ে বাবা নৌকায় বসে আছেন। সেই লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না সে গ্রামের সামাজিক পাণ্ডারা। নারায়ণগঞ্জে এক তরুণ গিটারিস্টের লাশ বাসার সামনে পড়ে থাকার পরেও সাত ঘণ্টা কেউ আসেনি সামাজিক পাণ্ডাদের ভয়ে।

বলি ভয়টা কিসের! যে হারে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে ওই সামাজিক পাণ্ডারাও আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের আক্রান্ত হবার ভয়টা আরও বেশি। সামাজিক ও গণমাধ্যমে যতটা দেখেছি, তাতে এসব জোটবদ্ধ পান্ডামি যারা করেছেন তাদের সামাজিক তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না।

এই যে রাস্তায় রাস্তায় বাঁশ বেঁধে লকডাউনের নামে নিজেদের মাসল পাওয়ার প্রদর্শনকালে এসব পাণ্ডারা ছিলেন রীতিমত গলায় গলায় জোটবদ্ধ। অতএব তারা আক্রান্ত হলেও তো সেই তাদের সৃষ্ট অস্পৃশ্য অবস্থায় নিজেদেরই পড়তে হবে। আর মৃতদের ক্ষেত্রে কী ঘটাচ্ছে পাণ্ডাগণ! এসব পাণ্ডারা এতটাই মূর্খ, তাদের ন্যূনতম ধারণাও নেই যে, মৃত ব্যক্তি ভাইরাস ছড়ায় না। করোনাভাইরাসের জীবিত ক্যারিয়ার লাগে। মৃত মানুষ ক্যারিয়ার হতে পারে না, ফলে মৃত শরীরে ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না। শুধুমাত্র গোছল দেয়ার সময় ও প্লাস্টিক ব্যাগে ভরার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

কবর দেয়ার পর তো ভাইরাস ছড়ানোর বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেও বলছে, কবর হলো সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। অথচ শেয়াল পণ্ডিত পাণ্ডাগুলো মৃত মানুষকে তার যোগ্য পাওনাটাও পেতে দিচ্ছে না।

অবশ্য দোষ এদেশের স্বাস্থ্য বিভাগেরও রয়েছে। এতগুলো ঘটনার পরও তারা পরিষ্কারভাবে জানায়নি যে মৃত বা কবরস্থ ব্যক্তি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। যে কোন জায়গায় কবর দিতেও কোন অসুবিধা নেই।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে এতো প্রটেকশন গিয়ার নিয়ে কেন স্বাস্থ্যকর্মীরা লাশ বহন এবং দাফন করছেন? এই প্রশ্নটার উত্তর হলো, যারা লাশটি নিয়ে আসছেন, তারা চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের সেই অ্যাম্বুলেন্সে অন্যান্য রোগীদের বহন করতে হয়, তাদের হাসপাতালে যেতে হয়, মর্গে যেতে হয়, তাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তাই তাদের নিজেদের ও অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে প্রটেকশন গিয়ার পড়তে হয়। অথচ এ বিষয়টি খোলাসা করে কেউ বলছেন না স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। ফলে উদ্ভব হচ্ছে অমানবিক পরিস্থিতির। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের তথা আইইডিসিআর যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদলে এমন কোনো গাইড লাইন দিতো তবে মৃত্যুর পরও মানুষকে হেনস্তা তথা অসম্মানিত হতে হতো না। সিনেমায় দেখতাম, মাফিয়ারা তাদের শত্রুদের লাশের সৎকার করতে দিতো না। সমুদ্রে বা নদীতে ফেলে দিয়ে হাঙর-কুমির দিয়ে খাওয়াতো। আমাদের সামাজিক পাণ্ডারাও এখন মাফিয়াদের জায়গা দখল করছে।

আর ইতালির মাফিয়ারা বদল করছে তাদের অন্ধকারের অবস্থান। মাফিয়ারাও বিপদটা বুঝেছে কিন্তু আমাদের ততোধিক সামাজিক পাণ্ডা তথা বিপ্লবী পাহারাদাররা সে কথা বোঝেনি। করুণা হয় এদের জন্য। সর্ব শক্তিমান তাদের মাফ করুক। আর আমাদের রক্ষা করুক সমূহ বিপদ থেকে।

লেখক: কাকন রেজা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়