শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:১৮ সকাল
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] মারাত্মক উদ্বেগ ও বঞ্চনায় দিন কাটাচ্ছে ভারতের যৌনকর্মীরা

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ভারতে চলছে লকডাউন। করোনা প্রতিরোধে সরকার কঠোর এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দলে দলে অভিবাসী শ্রমিক এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছুটতে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন শহরে যে হাজার হাজার যৌনকর্মী বসবাস করেন, তাদের যাওয়ার কোনো স্থান নেই। লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এবং একপেশে হয়ে থাকা এই সম্প্রদায়টির আয় রাতারাতি একেবারে নিচে নেমে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মারাত্মক উদ্বেগ ও বঞ্চনা। মুম্বইয়ের কামাথিপুরায় অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে পুরনো, সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ যৌনপল্লীগুলোর একটি। এতে প্রবেশ পথ সংকীর্ণ। আছে নানা রকম জটিলটা। মানবজমিন

[৩] সেখানে প্রবেশের জন্য পুলিশ পাস যোগাড় করতে সক্ষম হন ক্রান্তি নামের একটি এনজিওর বাণী দাস। তার সংস্থাটি মুম্বইয়ের যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করে। এসব তথ্য তুলে ধরেছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, বাণী দাস যখন তার ট্যাক্সি থেকে নামলেন, তখন ওই যৌনপল্লীর ভিতর থেকে যুবতীরা, বেরিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার চারপাশে ভিড় করতে থাকে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, আমার ভয় হচ্ছিল। কারণ, আমার কাছে মাত্র ১০০ প্যাকেট রেশন ছিল। কিন্তু আমাকে যারা ঘিরে ধরেছেন তাদের সংখ্যা কয়েক শত। পুলিশ ঘোষণা করতে লাগলো, যৌনকর্মীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেশন শেষ হয়ে যায়।

[৪] চার ঘন্টার নোটিশে ২৪ শে মার্চ ১৩০ কোটি মানুষের ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ফলে দেখা দেয় চরম এক বিশৃংখলা। এ ঘোষণার পক্ষে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। তারা বলে, করোনা ভাইরাসের বিস্তার থামাতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। শনিবার পর্যন্ত ভারতে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ৮৪৪৬ জনের মধ্যে। মারা গেছেন ২৮৮ জন।

[৫] ৮ই এপ্রিল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব সেক্স ওয়ার্ক প্রজেক্টস এবং ইউএন এইডস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে এ সময়ে যৌনকর্মীরা যে কঠোর অবস্থা ও বৈষম্যের শিকারে পরিণত হচ্ছেন তা তুলে ধরা হয়। এতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, এসব যৌনকর্মীর মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে এবং তাদের সেই মানবাধিকার পূর্ণ করতে।ভারত সরকার ২২৫০ কোটি ডলারের রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে গরিবদের জন্য। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, এই সুবিধা যৌনকর্মীরা পাবেন কিনা। বর্তমানে যেসব ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা রান্না করা খাবার। এ ছাড়া স্থানীয় অলাভজনক ও ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু মানুষ রেশন দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ও পুলিশ সহায়তা করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যৌনকর্মীরা উপেক্ষিত থাকছেন।
এ বিষয়ে ক্রান্তি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা তৃণা তালুকদার বলেন, যৌনকর্মীদের জন্য এখন পর্যন্ত কিছুই নেই। সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের উচিত এসব সম্প্রদায়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া। উল্লেখ্য, ভারতে যৌনকর্ম পরিচালিত হয় ১৯৫৬ সালের ইমোরাল ট্রাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্টের অধীনে। তবে বর্তমানে প্রকাশে এবং সংগঠিতভাবে বাণিজ্যিক যৌনকর্ম অবৈধ। যদিও সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবু ভারতে যৌনকর্মী রয়েছেন ১২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩০ লাখের মধ্যে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, গড়ে একজন যৌনকর্মী একজন খদ্দেরে কাছ থেকে আয় করেন ১০০ থেকে ৮০০ রুপি। এসব খদ্দেরের মধ্যে রয়েছেন অন্য স্থান থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক, ট্রাকচালক এবং এমন কিছু পুরুষ, যারা পরিবার থেকে দূরে রয়েছেন। লকডাউনের ফলে এরা সবাই চলে গিয়েছেন যার যার আস্তানায়। ফলে যৌনকর্মীদের মধ্যে এক হাহাকার পড়ে গেছে। তাদের প্রতিদিনের আয় কমে গেছে মারাত্মকভাবে।

[৬] মুম্বই থেকে প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত গারস্টিন ব্যাসন রোড। এটি জিবি রোড নামেই বেশি পরিচিত। রাজধানী নয়া দিল্লিতে এটিই সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী। এখানে রয়েছে ৭৮টি পতিতালয়। এতে অবস্থান করেন ২২২৫ জন নারী। এ হিসাব কতকথা নানের একটি এনজিওর। তারাও যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করে। এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও পতিতালয়ে অবস্থান করছেন প্রায় ১২০০ নারী। বাকিরা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।

[৬] ধারণত সন্ধ্যা বা রাতে খদ্দের নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে হতো যৌনকর্মী সুনীতাকে (ছদ্মনাম)। তার কথায় এখন কিছুই করার নেই। রাত নামে। আমরা টিভি দেখি। লুডু খেলি। নিজেদের এর মধ্যেই ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। আমাদের কাছে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা একটি বিলাসিতা ছাড়া কিছু নাা। কারণ, আমাদেরকে একটি রুমে অবস্থান করতে হয় ১৫জন নারী ও ১০টি সন্তানকে। তবে আমার অগ্রাধিকার হলো নিজেকে নিরাপদ রাখা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে চাই। আমার বোনের পড়াশোনার টাকা পাঠাতে চাই। তাকে বিয়ে দিতে চাই। আমার ওই বোনের স্বপ্ন সে একজন পুলিশ অফিসার হবে।

[৭] যৌনকর্মীদের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, তাদের হাতে কোনো নগদ অর্থ জমা থাকে না। নতুন কোনো খদ্দেরের কাছ থেকে যে অর্থ আসে, তাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঘর ভাড়া দেয়া নিয়ে বড় এক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তাদের কেউ কেউ বাড়িভাড়া প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন দিয়ে দেন। আবার কেউ কেউ প্রতি কাস্টমার প্রতি একটি অংশ দিয়ে দেন বাড়িওয়ালাকে।
কলকাতায় তাই বাড়িওয়ালাদের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে যৌনকর্মীদের জন্য কমপক্ষে তিন মাস বাড়িভাড়া শিথিল করতে। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে আরেকটি এনজিও। তারা হলো নিউ লাইট কলকাতা। এর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও নির্বাহী পরিচালক ঊর্মি বসু বলেছেন, বাড়িভাড়া পরিশোধ করার মতো কোনো রকম সক্ষমতা নেই যৌনকর্মীদের। গৃহহীন মানুষগুলোকে আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। কোনো মানুষই এসব যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি দিতে চান না। উল্লেখ্য, ভারতে যতগুলো যৌনপল্লী আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ যৌনপল্লীর কয়েকটি আছে কলকাতায়। এগুলো হলো সোনাগাছী ও কালিঘাট। যৌনকর্মীরা কোনো রেশন পাচ্ছেন না- এমন খবরে ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেন-এর চেয়ারপারসন রেখা শর্মা বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি লকডাউনের ফলে তারা কোনো রেশন পাচ্ছেন না। আমরা এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবো এবং কৌশল উদ্ভাবন করবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়