চিররঞ্জন সরকার : একটু আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরের হেডলাইন হলো ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা, ছয় চিকিৎসক বরখাস্ত’। উল্লিখিত ঘটনাটি ঘটেছে বর্তমানে দেশে করোনা চিকিৎসার প্রধান কেন্দ্র কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে। ডাক্তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, ওই হাসপাতালে গত দুই-তিন ধরে রান্নার ব্যবস্থা নেই। নির্ধারিত বাবুর্চি অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তারদের পাউরুটি-কলা খেয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও একজন বিকল্প বাবুর্চি ম্যানেজ করা হয়নি। ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীরা এখানে অবস্থান করেই দিনরাত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। দুইদিন খাবারের সমস্যায় ভুগে কয়েকজন ডাক্তার ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ করতে অপারগতার কথা জানান। বিষয়টি খুবই গুরুতর। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে সবার আগে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দেওয়া উচিত। খাওয়ার ব্যবস্থা না করে কাউকে দিনরাত কাজ করতে বলা কেবল অন্যায় নয়, অপরাধও বটে। ডাক্তারদের নিরাপত্তা পোশাক নেই, লাগাতার ডিউটি করার পর থাকার ব্যবস্থা নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এরপরও তারা চিকিৎসা দিয়ে যাবেন? অথচ গণমাধ্যমে ‘ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে অনীহার’ কারণগুলো বলা হচ্ছে না। আসলে বর্তমানে ডাক্তারদের ভিলেন বানানোর একটা সচেতন চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্ব পালনে এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। সংক্রমণ এখন প্রায় গোষ্ঠীপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন ডাক্তারদের। যাতে তারা শেষ পর্যন্ত বলতে পারেন, ‘ডাক্তাররা সহযোগিতা করেনি বলে এতো বিপুল মানুষের মৃত্যু হয়েছে’। সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝেন, এটা হচ্ছে ব্যর্থতার দায় ঘোচানোর একটা ব্লুপ্রিন্ট।
সরকার সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির ধূরন্ধর ব্যক্তির করা এই ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়নে গণমাধ্যমও ভূমিকা পালন করছে। তারা ডাক্তারদের ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা’র কথা বড় করে ছাপছে। কিন্তু কেন তারা অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন, সেটা অনুসন্ধান করছেন না, তা প্রকাশও করছেন না। পৃথিবীর সব দেশে করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডাক্তাররা। তাদের সব রকম নিরাপত্তা ও প্রয়োজনকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে ডাক্তারদের কেবল সেবা দেওয়ার ‘নির্দেশ’ দেওয়া হচ্ছে। তারা কী খাবে, কী পরবেÑ এটা কোনো ব্যাপার নয়। ভাবখানা এমন, মন্ত্রী, আমলা, প্রশাসক, পুলিশ, সেনা, শৌখিন স্বেচ্ছাসেবীরাই এ দেশে করোনা মহামারী ঠেকিয়ে দেবে। এটা খুবই ভুল ও আত্মঘাতী চিন্তা। করোনার বিরুদ্ধে যদি সত্যিকার প্রতিরোধ লড়াইয়ে নামতে হয় তাহলে কথা শুনতে হবে ডাক্তারদের। তাদের দাবি-দাওয়া-প্রয়োজন মেটাতে হবে। তাদের পরামর্শে চলতে হবে। তাদের বল-ভরসা যোগাতে হবে। ইতোমধ্যে প্রায় তিন ডজন ডাক্তার কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নির্ণিত-অনির্ণীত হাজার হাজার রোগী চিকিৎসার অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ক্ষতি হবে দেশের মানুষের। বিষয়টা যেন আমরা ভুলে না যাই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :