শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ০৭:২৪ সকাল
আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ০৭:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসন্ন ভাতযুদ্ধের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুততো ?

ইসমাঈল হুসাইন ইমু : [২] করোনা সংকট অর্থনীতিতে বড় ধরণের আঘাত হানবে, এবিষয়ে বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। আমরাও এটা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে প্রতিদিন অন্তত দু'বেলা ভাত খেতে হবে। আসন্ন সেই ভাতযুদ্ধের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুততো ? নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমন চিত্র তুলে ধরেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধূরী।

[৩] তার স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- লক্ষণ খুব ভালো ঠেকছেনা। গতকালের দুটি নিউজ আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবরটি দিয়েছে দৈনিক কালের কন্ঠ। ‘খাবারের অভাবে শিশুর আতœহত্যা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় আফরোজা খাতুন (১০) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার বিকেলে গলায় ফাঁস নিয়ে নিজ বাড়িতে সে আত্মহত্যা করে। স্বজনরা দাবি করেছেন, কয়েকদিন ধরে অনাহারে পরিবারটি। খাবারের জন্য কান্নাকাটি করায় পিতা থমক দেন আফরোজাকে। তারপরই ঘটে আত্মহত্যার ঘটনা। খাবারের অভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।

[৪] সূত্র জানায়, আফরোজার পিতা আলম শেখ পেশায় তাঁত শ্রমিক। থাকেন কামারপাড়া ওয়াপদা বাঁধে। দুস্থ এ পরিবারটির সন্তান আফরোজা আত্মহত্যা করেছে মূলত ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে। শুক্রবার বিকেলে সে কয়েক দফা খাবার চেয়েছে বাবার কাছে। কিন্তু খাবারের বদলে ধমক শুনতে হয়েছে শিশুকে।

[৫] স্বজনরা দাবি করেছেন, তাঁত শ্রমিক আলম শেখের কারখানা বন্ধ দশদিন। জমা টাকায় ৪/৫দিন সংসার চললেও গত কয়েকদিন কার্যত অনাহারে ছিলেন শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময়ে আলম পাননি সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা। কেউই খোঁজ নেননি। আফরোজার মৃত্যুর পর অনেকে এসেছেন বাড়িতে। পৌর মেয়র শনিবার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ওয়াপদা বাঁধে প্রায় ৫শ’ পরিবারের বাস। জন প্রতিনিধিরা তাদের অনেকের আইডি কার্ড নিয়ে গেলেও ত্রাণ সহায়তা মেলেনি।

[৬] বাবা আলম শেখ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসন কড়াকড়ি করছে। তাই দশদিন ধরে কাজ করতে পারছিনা। ঘরেই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। হাতে নগদ টাকা নাই,তাই চালডাল কিনতে পারিনি। ঘরে খাবার নেই বলে মেয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপর মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে।
[৭] বেলকুচি পৌরসভার মেয়র আশানূর বিশ্বাস বলেন, কর্মহীন দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য অপর্যাপ্ত। সে কারণে সকল মানুষকে একসাথে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। খাদ্য সহায়তা আরো বাড়ানো দরকার। আলমের পরিবারের মতো লাখো পরিবার আজ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সরকারি ত্রাণ সহযোগিতাও পাচ্ছে না। পেলেও অতি সামান্য। সরকার যা দিচ্ছে তার সিংহভাগই চুরি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে করোনায় দেশ আরো দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে এ সব পরিবারগুলোকে না খেয়ে মরতে হবে।পরিকল্পনার অভাব ও লুটপাটের কারণে ৭৪'র মতো আবারো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।

[৮] দ্বিতীয় খবরটি দিয়েছে ডিবিসি টেলিভিশন। ‘জামালপুরে ত্রাণের দাবিতে নিজ নিজ বাড়ির সামনে অবস্থান’ শীর্ষক এ সচিত্রপ্রতিবেদনে বলা হয়, জামালপুরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন নি¤œ আয়ের মানুষেরা ত্রাণের দাবিতে নিজ নিজ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। গত শনিবার দুপুরে শহরের কাচারীপাড়ায় ওই সকল পরিবারের মানুষেরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ওই সকল পরিবারের লোকজন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ বাড়ির সামনে ত্রাণের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন পোস্টার হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন।

[৯] ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, কোন কাজ না থাকায় তারা বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু কোন ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় গত ১৫দিন যাবত অনাহার-অর্ধাহারে খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। এ সময় সরকারের কাছে ত্রাণ সহযোগীতা প্রদানের জন্য দাবি জানান ওই সকল ব্যক্তিরা। রাইজিংবিডি ডটকম তাদের এক প্রতিবেদনে ছিন্নমূল মানুষের দু:খ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরছে ‘গুলিস্তানে খাবারের জন্য ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,"সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি যত গড়াচ্ছে ততই ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার বাড়ছে। এসব মানুষ খাবার না পেয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছেন।
[১০] এপ্রিল করোনা সংকটের মাস, এপ্রিল বোরো ধান কাটারও মাস, তরমুজ বাঙ্গি, সবজি ও আম ঘরে ও বাজারে তোলার মাস। বোরো কাটার পরপরই বোনা হবে আউশ, আমন ও পাট। কিন্তু সব দিকে শুধু নেই নেই নেই। ধান কাটার লোক নেই, পাটের বীজের আমদানি অর্ধেকে, মজুর খাটানো ও সেচের টাকাও নেই কৃষকের ঘরে। সবচেয়ে বড় কথা শ্রমিকেরাও তো ঘরবন্দী!
[১১] ধান সবজি ফল মিলিয়ে এপ্রিল-মে মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন কৃষিপণ্য বাজারে আসে। কৃষকের সারা বছরের বিনিয়োগের ফসল তোলার মৌসুম। তাঁরা ফসলের দাম না পেলে খাদ্যনিরাপত্তা বলি, কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বাঁচানো বলি, সবই ঘোর সংকটে পড়ে গেছে করোনার কারণে। সংকট কাটানো না গেলে জুন থেকে খাদ্য সরবরাহেও ধাক্কা পড়তে পারে। যা করার এখনই করতে হবে।
[১২] হাওরের ধান পেকে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এর পরেই উত্তর–দক্ষিণাঞ্চলের ধানও ঘরে তুলতেই হবে। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, পটোল, টমেটোসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি মাঠ থেকে তোলা আর বাজারে নেওয়ার মতো শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মিলছে না। আমচাষিদেরই বা কী হবে? পাটের বীজ আসেনি ভারত থেকে, এলেও রোপণ হবে কার হাত দিয়ে? লকডাউন জনিত পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক যেতে পারছেন না; গেলেও মজুরি দেওয়ার সক্ষমতা অনেকেরই নেই।
বাংলাদেশের কৃষক যুগের পর যুগ খাদ্যনিরাপত্তা জুগিয়ে গেছেন। এখন তাঁদের প্রতিদান চাই। ফসল কাটা থেকে শুরু করে বাজারে ও গুদামে নেওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রের সাহায্য চাই। লোক, মজুরি, পরিবহনে সরকারি সহায়তা জরুরি। সরকারিভাবে ন্যায্য কি তার চেয়ে বেশি দামে ফল শস্য কিনে সরকারি গুদামে যত দূর পারা যায় রাখতে হবে। এই সহায়তাটুকু দিয়ে কৃষক পরের ফসল রোপণের পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন। খাদ্য ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে সরকারি তত্ত¡াবধানে। সব ধরনের কৃষিপণ্যের একটি তালিকা করে তার কেনাবেচা ও পরিবহনকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখতে হবে।
[১৩] একই সঙ্গে গ্রামে কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর অর্থায়ন বাড়াতে হবে। সরকার করোনা পরিস্থিতির কারণে যে আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে, তাতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি পিছিয়ে নতুন করে সহজ ঋণের বন্দোবস্ত করতে হবে সরকার ও এনজিওগুলোকে। সেচযন্ত্র সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং এগুলো করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়