শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:২৮ সকাল
আপডেট : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ড্রামেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নিউজ ডেস্ক : [২] বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে নভেল করোনাভাইরাস কোভিড-১৯। এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, আর চার থেকে আট এভাবে চক্রাকারে গত ৮ মার্চ থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমিত করেছে ৪২৪ জনকে; কেড়ে নিয়েছে ২৭ জনের প্রাণ। আমাদের সময়

[৩] এ তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইইডিসিআর’র। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মূলত ক্লাস্টার (একটি এলাকায় কম দূরত্বের মধ্যে অনেক রোগী) এলাকা থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভয়াবহতা।

[৪] ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেগুলো লকডাউন করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ওইসব এলাকায় কঠোর নজরদারী বজায় রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত

[৫] করতে এবং সড়ক জীবাণুমুক্ত করতে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। অথচ কঠোর এই নজরদারীর মধ্যেই লকডাউনের শর্ত ভেঙে অভিনব কায়দায় (কখনও মাছবাহী ড্রামে, কখনও খালি ট্রাকে পর্দা টাঙিয়ে) করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। করোনা ইস্যুতে দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তারা।

[৬] স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সামাজিক দূরত্ব মেনে সরকার নির্দেশিত পথে না চললে পরবর্তীতে কারোর পক্ষেই গণহারে করোনা সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হবে না। এতে করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমেরিকা ও ইতালীর চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। এদিকে করোনা প্রতিরোধে সরকারের যথাযথ নির্দেশ মেনে চলার আহবান জানিয়েছে পুলিশও।

[৭] গত বৃহস্পতিবার সকালে লকডাউনের নিয়ম ভেঙে ঢাকা ছাড়ার সময় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় মাছবাহী ড্রাম থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। মাছ পরিবহনের ড্রামে করে কুমিল্লার চান্দিনায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো ওই যাত্রীদের। এ ঘটনায় গাড়িটি জব্দ ও যাত্রীদের জরিমানা করা হয়। ওই দিনই রাজধানীর গাবতলীতেও দেখা গেছে একই চিত্র। ঢাকা ছাড়ার চেষ্টারত অনেককে পরে যাচাই বাছাই শেষে ফেরত পাঠানো হয়।

[৮] করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি নারায়ণঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর সেখান থেকে পালায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ১০৯ জন। কোস্টগার্ড ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা ভাড়ায় ট্রলারযোগে তারা গোপনে চলে যায় বরগুনার আমতলীতে। খবর পেয়ে গত বুধবার রাতে আমতলীরর গাজীপুর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আমতলী থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে গোপনে ট্রলারযোগে বরগুনা আসায় নারী ও শিশুসহ ১০৯ জনকে আটকের পর আমতলী উপজেলার আমরাগাছিয়া সাইক্লোন শেল্টারে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

[৯] পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া এক নারী (৩২) রোগী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তার পুলিশ কনস্টেবল স্বামীর সঙ্গে রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। খবর পেয়ে গত বুধবার সকালে ওই নারী রোগী ও তার স্বামীকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন কর্নারে নেয়া হয়। সেই সঙ্গে ওই পরিবারটির গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রাম ‘লকডাউন’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান খান ও রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার।

[১০] এদিকে সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে গত ৩ দিনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে নানা কৌশলে পালিয়ে গিয়ে অনেকেই বর্তমানে রংপুরের পীরগাছায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে তো থাকছেনই না, উপরন্তু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আড্ডা দিচ্ছেন তারা পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে।

[১১] গতকাল শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা আমাদের সময়কে জানান, করোনা ভাইরাস ইস্যুতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। এরই অংশ হিসেবে জরুরি সেবা ছাড়া যে কারো ঢাকায় প্রবেশ ও ত্যাগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিশেষ তল্লাশী চৌকী ও গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে জরুরি সেবা ছাড়া সাধারণ জনগণকে ঢাকায় প্রবেশ অথবা ত্যাগ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

[১২] সেই সঙ্গে জনগণের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য যেকোনো জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে বাইরে ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

[১৩] লকডাউনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মোজাহেরুল হক আমাদের সময়কে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং লকডাউনের নির্দেশিত পথে চলা দেশের প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব। কিন্তু আমরা অধিকাংশরাই তা অবহেলা করছি, মানছি না। এভাবে চলতে থাকলে মহামারী ভয়াবহ রূপ নিলে কারোরই কিছু করার থাকবে না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেমন- ইতালি, স্পেন, ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্র; তাদের এত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকার পরও তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশীম খাচ্ছে। আমাদের দেশেও মহামারী সেভাবে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসক বা সরকারের কিছুই করার থাকবে না।

[১৪] তাই নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকতে হবে, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত থুতে হবে, বাইরে বের হওয়ার সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা গ্রহণ (মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার) করতে হবে। তা না হলে সামনে আমাদের জন্য হয়ত ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে বলেও অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়