শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনাভাইরাসে পুষ্টিকর খাদ্যের ভূমিকা

ড. সুমাইয়া মামুন : বর্তমানে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের একটি নতুন নাম। এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করছে। এমতাবস্থায় করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের দেহকে করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা। এ সময়ে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। কারণ পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আমাদের খাবারে পরিমাণমতো শর্করা (কার্বোহাইড্রেট), আমিষ (প্রোটিন), চর্বি (ফ্যাট), ভিটামিন, মিনারেলস ও পানি থাকা জরুরি। করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে আমাদের কী কী খাদ্য উপাদান উপকারে আসতে পারে তা জেনে নেই।


১. পানি : পানির অপর নাম জীবন এটা আমরা সবাই জানি। দৈনিক ৬-৮ গ্লাস পানি পান করলে আমাদের দেহের পানিশূন্যতা দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে জ্বরের সময় আমাদের দেহে ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) দেখা দেয়। তাই পানিশূন্যতা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২. দৈনিক ২ কাপ (৪ সারভিং) ফল, ১/২ কাপ সবজি (৫ সারভিং), ১৮০ গ্রাম শস্য জাতীয় খাবার (চাল, গম, ওটস, বার্লি ইত্যাদি) এবং ১৬০ গ্রাম প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি) খাবারের মেনুতে রাখতে হবে। ৩. প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল ও সবজি খেতে হবে। কাঁচা সবজি দিয়ে সালাদ বানানোর পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ৪. ভিটামিন ‘সি’ : প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খেতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষতা বাড়াতে, আয়রন এবসর্পশন (শোষণ) এবং নতুন কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিভিন্ন দেশি ফল যেমন : আমলকি, পেয়ারা, লেবু, বাতাবি লেবু/জাম্বুরা, জাম, আমড়া, বরই, পেঁপে, কমলা ও মাল্টায় প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে। তাছাড়া সবজির মধ্যে কাঁচামরিচ, কাঁকরোল, করলা, কচু শাক, পাট শাক, পুঁই শাক এবং মিষ্টি আলুতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ থাকে।
৫. ভিটামিন ‘এ’ ও বিটা ক্যারোটিন : গাঢ় সবুজ এবং রঙিন শাকসবজিতে ভিটামিন ‘এ’ ও বিটা ক্যারোটিন থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। গাজর, টমেটো এবং মিষ্টিকুমড়াতে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান পাওয়া যাবে। ৬. জিঙ্ক : জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে। গরু/মুরগির মাংস, ডিম, কলিজা এবং দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিঙ্ক থাকে। তাছাড়া চাল, চিড়া, পালংশাক, বরবটি, লালশাক, ছোলা, বেদানা, চিনা বাদাম, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও (মলা, পাবদা, তেলাপিয়া, রুই, চিংড়ি ইত্যাদি) জিঙ্কের ভালো উৎস। ৭. ম্যাগনেসিয়াম : বিভিন্ন জাতের বাদাম, ডাল, ব্রকলি, বাধাকপি, সবুজ শাক, কলা এবং ডার্ক চকোলেট ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ব্লাড সুগার এবং হরমোনের ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই লকডাউনের সময় ঘুমের সমস্যা বা অবসাদে অনেকে ভুগছেন। ঘুমের সমস্যা এবং অবসাদ দূরীকরণের ক্ষেত্রেও ম্যাগনেসিয়াম ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
৮. আদা, রসুন এবং কালোজিরায় আছে এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও এন্টি-ভাইরাল গুণ যা দেহের বিভিন্ন রকম প্রদাহ/ব্যথা নিরসনে সাহায্য করে। এগুলো সামান্য পরিমাণ ব্যবহারই যথেষ্ট। আলাদা করে বেশি বেশি খাবার প্রয়োজন নেই। আদা এবং মধু দিয়ে হালকা গরম পানি অথবা চা গলা ব্যথার জন্য উপকারী। সামান্য কালজিরা ও রসুন শাক-সবজিতে রান্নার সময় দেওয়া যেতে পারে। যে ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে : ১. চিনি ও লবণ কম পরিমাণে খেতে হবে। সফট ড্রিঙ্কসে (কোক, পেপসি, স্প্রাইট, ডিউ ইত্যাদি) চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া বাসায় বানানো তাজা ফলের জুসেও আমরা চিনি মিশিয়ে খেয়ে থাকি। এভাবে কয়েক গ্লাস জুসে চিনির পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিনি ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া লবণ ব্লাড প্রেশারের জন্য ক্ষতিকর।
২. অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যারা হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য এ ধরনের খাবার ক্ষতিকর। ৩. প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত ভাজা পোড়া (সমুচা, শিঙ্গাড়া ইত্যাদি) যথাসম্ভব কম খেতে হবে। যেহেতু এই মুহূর্তে আমাদের চলাফেরা সীমিত সেহেতু এ ধরনের খাবার শরীরের ওজন বাড়াবে। তাছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. অতিরিক্ত চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন। চা-কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। মনে রাখতে হবে দৈনিক ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জরুরি। উপরোক্ত খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি দৈনিক ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। এ সময়ে বাসায় বসে থেকে আমাদের খাওয়া ও ঘুমের সময় এলোমেলো হয়ে যায় যা আমাদের হজমে প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো খাওয়া ও ঘুম নিশ্চিত করতে হবে না হলে পুষ্টিকর খাবারের পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায় না। পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড), মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রখালে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়