শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ০৪:২২ সকাল
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ০৪:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]চার্লি চ্যাপলিন ট্র্যাজেডি ও কমেডির মিশেলে জীবনের গল্প বলতেন

দেবদুলাল মুন্না:[২]চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বকালের সর্বাধিক সমাদৃত নামগুলোর একটি হলো স্যার চার্লস স্পেন্সার ‘চার্লি’ চ্যাপলিন, যিনি আমাদের কাছে শুধু চার্লি চ্যাপলিন হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বৈচিত্র্যময় অভিনেতা, লেখক-চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র ও সংগীত পরিচালক। বিনোদন জগতে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল ৭৫ বছরেরও বেশিকাল ব্যাপ্ত এবং এ সময়ে তাকে দেখা গেছে দ্য কিড (১৯২১), দ্য গ্রেট ডিকটেটর (১৯৪০) প্রভৃতি কালজয়ী চলচ্চিত্রে।লাইঢ স্টোরিজ

[৩]জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল, লন্ডনে। তার বাবা-মাও কাজ করতেন চলচ্চিত্র জগতে। খুবই অল্প বয়সে তার মদ্যপ পিতার মৃত্যু ঘটে, এবং তারপর তার মা মানসিক বিকার হারিয়ে ফেললে, তাকে ভর্তি করা হয় মানসিক হাসপাতালে। এর ফলে চ্যাপলিন ও তার ভাই পড়েন বিপাকে। নিজেদের জীবনধারণের ব্যবস্থা তখন তাদের নিজেদেরকেই করতে হবে। তাই বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তারাও মিউজিক হলে পারফর্মার হিসেবে যোগ দেন, এবং অল্প সময়ের মধ্যেই একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চ্যাপলিনের।

[৪]১৯১০ সালে, মাত্র ২১ বছর বয়সে ভাগ্যান্বেষণে আমেরিকায় পাড়ি জমান চ্যাপলিন। সেখানে গিয়ে তিনি লাভ করেন একটি নবীন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা। এই আমেরিকান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রথম দিককার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র, দ্য ট্রাম্প। বোলার টুপি পরা, গোঁফওয়ালা, গায়ে ঠিকমতো ফিট না হওয়া চরিত্রটিই পরিণত হয় চ্যাপলিনের ট্রেডমার্কে। নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতায় পরিণত হন চ্যাপলিন, যার জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী।

[৫]তখনকার দিনে চ্যাপলিনের মতো এমন সর্বগুণসম্পন্ন শিল্পী খুব কমই ছিল। তিনি তার সকল চলচ্চিত্রে কেবল অভিনয়ই করতেন না, পাশাপাশি সেসব ছবির কাহিনী লিখতেন, পরিচালনা করতেন, এমনকি নিজেই অর্থায়নও করতেন। তিনি এতটাই পারফেকশনিস্ট ছিলেন যে, একটি দৃশ্য শতভাগ মনঃপুত হওয়ার আগে তিনি কখনোই তার অভিনেতাদেরকে ছাড় দিতেন না। এর জন্য প্রয়োজনে ১০০ বার শট নিতে হলে, তাতেও পিছপা হতেন না তিনি।অথচ এরপরও, তার সৃজনশীলতায় কখনোই বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না। নিজের পারফরম্যান্সে সবসময় নতুন নতুন বৈচিত্র্যের সংযোজনে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। দরকার পড়লে চিত্রনাট্যও বারবার পরিবর্তন করতে থাকতেন তিনি।

[৬]চ্যাপলিনের সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে – সিটি লাইটস (১৯৩১), দ্য গ্রেট ডিকটেটর (১৯৪০), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫), দ্য কিড (১৯২১), দ্য সার্কাস (১৯২৮), মঁসিয়ে ভের্দু (১৯৪৭) প্রভৃতি। এর মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ১৯৪০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য ডিকটেটর চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে, যেটি ছিল স্বৈরশাসক হিটলার ও মুসোলিনিকে নিয়ে ব্যাঙ্গধর্মী একটি চলচ্চিত্রে। এই চলচ্চিত্রে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন চ্যাপলিন। একটি ছিল বৈষম্যের শিকার এক ইহুদি নাপিতের চরিত্র, অপরটি টোমানিয়ার স্বৈরশাসক অ্যাডেনয়েড হিংকলের। অ্যাডেনয়েড হিংকল চরিত্রটি ছিল পরিষ্কারভাবেই অ্যাডলফ হিটলারের প্যারোডি।

দ্য ডিকটেটর চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মাত্র এক বছর আগে। সে সময়ে চলচ্চিত্রটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, কেননা তখন আমেরিকায় সেমিটিজম-বিরোধী চিন্তাধারা ছিল প্রবলভাবে বিদ্যমান। যদিও এই চলচ্চিত্রে চ্যাপলিন হিটলারের প্যারোডি করেছিলেন, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানোর ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান। আর এর ফলে সরকারি কর্তৃপক্ষ তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

[৭]যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জে এডগার হুভারের নেতৃত্বে এফবিআই চ্যাপলিনের উপর নজর রাখতে শুরু করে, কেননা অভিযোগ ছিল চ্যাপলিন তার কথাবার্তা এবং সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে কমিউনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির প্রচারণা চালাতেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৫২ সালে আমেরিকা সরকার তার ভিসা কেড়ে নিয়ে সেদেশে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এবং চ্যাপলিন বাধ্য হন সুইজারল্যান্ডে বসবাস শুরু করতে।পরবর্তীতে অবশ্য চ্যাপলিন দাবি করেছিলেন যে তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন না, কিন্তু কমিউনিস্টদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপনেও তিনি অস্বীকৃতি জানান, কেননা তিনি ম্যাককার্থি যুগের অবস্থাকে পছন্দ করতেন না।

 

[৮]১৯৫৬ সালে প্রথম চ্যাপলিনকে নাইটহুড প্রদানের চিন্তাভাবনা শুরু করে যুক্তরাজ্য। কিন্তু আমেরিকা সরকারের রোষানলে পড়তে হবে, এমন আশঙ্কায় সে প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে কনজার্ভেটিভ ক্যাবিনেট। তাই সে যাত্রায় নাইটহুড পাওয়া হয়নি চ্যাপলিনের। তবে শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইটহুড লাভ করেন তিনি।

[৯]১৯৭২ সালে চ্যাপলিন একটি অস্কার পুরস্কারও লাভ করেন তার ১৯৫২ সালের চলচ্চিত্র লাইমলাইটের অরিজিনাল মিউজিক স্কোরের জন্য। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্রটি পুনঃমুক্তি দেয়ার ফলে এতদিন বাদে চ্যাপলিনের ভাগ্যে এ পুরস্কার জোটে। তবে অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত হওয়ার পরও, অভিনেতা ক্যাটাগরিতে কখনোই অস্কার জিততে পারেননি তিনি।

অবশ্য ১৯৭২ সালের অস্কারেই তিনি একটি বিশেষ সম্মানসূচক পুরস্কারও লাভ করেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অপরিমেয় অবদান রাখার জন্য।” এই পুরস্কার গ্রহণের জন্য তিনি নির্বাসন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হয়েছিলেন, এবং পুরস্কার গ্রহণের প্রাক্কালে অস্কার ইতিহাসের দীর্ঘতম ‘স্ট্যান্ডিং অভেশন’-ও লাভ করেছিলেন তিনি।

[১০]ব্যক্তিজীবনে চ্যাপলিন খুব একটা সুখী ছিলেন না কখনোই। তিনজন পৃথক নারীর সাথে মোট ১১টি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও তার বেশ কয়েকজন প্রেমিকা ও স্ত্রী ছিল। ১৯৭৭ সালের বড়দিনে সুইজারল্যান্ডের ভেভেতে ঘুমের মাঝেই মৃত্যুবরণ করেন চ্যাপলিন। এভাবে অবসান ঘটে তার ঘটনাবহুল ৮৮ বছরের জীবনের।

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়