মাসুদ আলম : [২] গতবছরের ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় গত বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা করে তার সহপাঠীরা।
[৩] এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। অপরদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তাকে থানায় ঢেকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা প্রচারের ঘটনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আইসিটি আইনে আরও একটি মামলা করেন।
[৪] এখনও পুলিশ নুসরাতের বাড়িটিতে তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন। বাড়িতে এখনো চাঞ্চল্য ফেরেনি। নুসরাতের পরিবার জানান, আদালতের দেওয়া রায় দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে যান তারা। রায় কার্যকর হলে নুসরাতের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। বেশ কিছু দিন ধরে আসামির স্বজনরা নুসরাতের পরিবারের লোকজন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষোদগার করে আসছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
[৫] মামলাটির তদন্ত শেষে ১৬ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে ৬১ কার্য দিবসের মধ্যে ৮৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর সকল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম , জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, হাফেজ আব্দুল কাদের , আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি , উম্মে সুলতানা পপি, আব্দুর রহিম শরীফ , ইফতেখার উদ্দিন রানা , ইমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম । নিম্ন আদালতে রায়ের পর প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ, নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসাইন ও উম্মে সুলতানা পপি খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
[৬] বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, গতবছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলাটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :