আহসান হাবিব : ১৮ শতকের প্রখ্যাত মুজাদ্দিদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (র.) বলেছিলেন, “প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় একজন মুজাদ্দিদ আগমন করেন। হিজরী প্রথম শতকের সেই মুজাদ্দিদ ছিলেন আহলে সুন্নাহ’র ইমাম হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (র.)।
হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (র.) এর মৃত্যুর আগ মুহুর্তের অসুস্থতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার স্ত্রী ফাতেমা বলেন, সেই রাতে তার অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে তিনি রীতিমতো কাঁপছিলেন। সারাটা রাত তিনি ঘুমুতেও পারেননি। তাই আমরা পালাক্রমে তার সাথে জেগে ছিলাম। একটু পর পর এসে তার অবস্থা দেখে যাচ্ছিলাম।
এভাবেই রাত পার হয়ে সকাল এলো। তার একজন সেবক ছিল যার নাম মারসাদ। আমরা ওকে বললাম, তুমি সবসময় আমীরুল মুমেনিনকে চোখে চোখে রাখবে- যাতে তিনি কিছু চাইলেই তুমি দিতে পারো।
রাতে ঘুমুতে না পেরে আমরা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই মারসাদকে দেখাশোনার ভার দিয়ে আমরা একটু ঘুমুতে গেলাম। একটু বেলা করেই আমাদের ঘুম ভাঙলো। আমরা ছুটে খলীফাকে দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি, মারসাদও খলীফার ঘরের বাইরে বসেই ঘুমুচ্ছে। আমি তাকে জাগালাম। বললাম, তোমাকে খলীফার সেবা করার জন্য রেখে গেলাম। আর তুমি বাইরে বসে ঘুমুচ্ছো। ব্যাপারটা কী?
মারসাদ বলল, আমি তার পাশেই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ যেন তার কী হলো। তিনি আমাকে বললেন, মারসাদ তুমি আমাকে আল্লাহর হাওলায় রেখে ঘরের বাইরে যাও। কেননা আমি এমন কিছু দেখতে পেয়েছি যার অবয়ব মানুষ বা জিন কারো সাথেই মিলে না।
আমি যখন বাইরে বেরিয়ে এলাম, আমি শুনছিলাম, খলীফা সুরা কাসাসের সেই আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেন, “এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে চায় না। অনর্থও সৃষ্টি করতে চায় না। খোদাভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম।” (সুরা আল কাসাস: আয়াত ৮৩)
এই আয়াতের তেলাওয়াত শুনে আমি দৌড়ে গিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করলাম। গিয়ে দেখলাম তিনি মুখটি ডান কাত করে রেখেছেন। তার চোখদুটো বন্ধ। ততক্ষণে তিনি রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলেও গেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :