শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:৪৬ সকাল
আপডেট : ০৫ এপ্রিল, ২০২০, ০৫:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোভিড-১৯ যুদ্ধে বাংলাদেশ

ডঃ শোয়েব সাঈদ, মন্ট্রিয়ল : গত সপ্তাহে নির্বাচিত কলামে লিখেছিলাম কোভিড-১৯ যুদ্ধে কানাডা। বৈশ্বিক এই যুদ্ধে কানাডা সংক্রমণের স্যুনামিটা আর মৃত্যুর মিছিলটা ঠেকানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত। গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখিতা চাপিয়ে রাখতে কানাডা সরকার প্রতিদিনই কঠোরতর অবস্থানে কৌশল বদল করছে। আমাদের অভিবাসী মননে দেশ প্রেমের প্রবল টানে বাংলাদেশ আর কানাডা অনবরত এপিসোড বদল করে যেন একটাকে ফেলে আরেকটা নয়। জনগণ, সরকার ব্যবস্থা আর সিভিল সার্ভিস সহ নানামুখী ফ্যাক্টরের আকাশ-পাতাল পার্থক্যে কানাডার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা বালখিল্যপনা। বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সচিব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলেন তাতে বলা ছিল কানাডার সাথে তুলনা করলে কানাডার জনগণের দিকে থাকান, থাপ্পড়টা আপনার গালে ফিরে আসবে। কথাটা খুবই সত্য, কতিপয় মন্ত্রী আছেন সকাল বিকেল সিঙ্গাপুর আর কানাডার সাথে তুলনা করেন। আমজনতার উদ্দেশে দেওয়া এই সত্যকথন অতিকথনে অভ্যস্ত কিছু মন্ত্রী বিবেচনায় নিলে জনগণের আস্থা বাড়বে বই কমবে না।

একটি সংকট একটি দেশে সবসময়ই কিছু জাতীয় বীর তৈরি করে। কানাডার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ থেরেসা ত্যাম, উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ হাওয়াড জু সহ বিভিন্ন প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ প্রতিদিন জনগণের সামনে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য–উপাত্ত নিয়ে হাজির হয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ব্যাখ্যা করার কারণে ইতিমধ্যেই কানাডার জনগণের কাছে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত। আমাদের বাংলাদেশে অধ্যাপক মীরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরার তো তাই হবার কথা, কিন্তু হতে কি পেরেছেন? সিস্টেমের প্রতি অনাস্থা সত্য ভাষণেও সংশয় তৈরি করে। তাই কানাডার জনগণের দিকে নয়, সিস্টেমের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের সংশয়পূর্ণ চাহনিটার দিকে তাকালেও থাপ্পড়টা আমাদের গালেই যে ফিরে আসে।

মার্চের ৮ তারিখ, বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ এর রোগী শনাক্ত হয়। পজিটিভ তিনজনের দুজন ইতালি থেকে আগত আর অন্যজন এদের একজনের দ্বারা সংক্রমিত আত্মীয়। প্রায় একমাসের ব্যবধানে গতকাল পর্যন্ত ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে। দেশওয়ারী বৈশ্বিক ডাটা বিশ্লেষণে দেখা যায় ১০০ রোগী শনাক্ত হবার ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে মারাত্মক আক্রান্ত দেশগুলোতে এক্সপোনেনশিয়াল ফেজ অর্থাৎ গ্রাফের হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বগতির সুচনা ঘটে। এই অভিজ্ঞতায় এবং সরকারী তথ্য সঠিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি ঘটবে বুঝবার জন্যে আরো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে টেস্টের পরিমান নজীরবিহীনভাবে অল্প আর এই অল্প টেস্টে এই ধারণা হতেই পারে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা হয়তো অনেক আগেই ১০০ পার হয়ে গেছে। ফলে এক্সপোনেনশিয়াল ফেজের চাপটার অকস্মাৎ আবির্ভাব কিন্তু চমকে দিতে পারে আমাদের। এই চমকে দেবার ক্ষেত্রে যে ভয়টি কাজ করছে, সেটি হচ্ছে কম টেস্ট করার ফলে আমরা জানতে পারছিনা চারপাশে কারা সংক্রমিত।

ভয়ঙ্কর বিষয়টা হচ্ছে কেউ কেউ সংক্রমিত হয়ে চারপাশে ছড়াচ্ছেন নিজের কোন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই। ভৌগলিকভাবে, তাপমাত্রায় আর আর্দ্রতায় ভারত আমাদের কাছের দেশ। তবে আয়তন আর জনসংখ্যায় আমাদের কয়েকগুন বড়; প্রযুক্তি আর স্বাস্থ্যখাতের উন্নতিতেও আমাদের চেয়ে অনেকগুন এগিয়ে। জনসংখ্যায় পাকিস্থান আমাদের কাছাকাছি, স্বাস্থ্যখাতেও তেমন এগিয়ে নেই। এই পাকিস্থানের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যায় এরা প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি রোগী শনাক্ত করেছে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানটি মোটামুটি এরকম ১০০ জনের টেস্টে ৪-৫ জনের পজিটিভ হয়। এই হিসেবে পাকিস্থানে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের টেস্ট হয়েছে বলে ধারণা। আমাদের বাংলাদেশ ২ হাজারও টেস্ট করতে পারেনি। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের এই দুর্দশা রীতিমত চমকে উঠার মত। স্বাস্থ্য খাতে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বেশ ব্যয়বহুল বিধায়, এগুলি নিয়ে আমাদের দেশে বরাবরই দুর্নীতির একটি চক্র সদা সক্রিয়। টেলিভিশনে এনিয়ে অনেক প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে। উপেক্ষা আর অদক্ষতায় স্বাস্থ্যখাতের যে হাল হয়েছে, তাতে সক্ষমতার প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেতৃত্ব দিবে স্বাস্থ্যখাত, আর তাদের পেছনে থাকবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র আর এটিই বৈশ্বিক চিত্র, দেশে দেশে। টেস্ট টেস্ট টেস্ট মন্ত্রের এই ডামাডোলে যথেষ্ট সময় পাবার পরেও ১৭ কোটি মানুষের দেশে উপরন্তু ইতালি তথা ইউরোপ থেকে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী দেশে ফেরার এই জটিল পরিস্থিতিতে টেস্টে স্বল্পতা আর সিদ্ধান্তহীনতা ঝুঁকিটাকে প্রবলতর করেছে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গার বিশাল বিশাল হাসপাতাল দেখে আমরা গর্বভরে স্বাস্থ্য খাতের প্রভূত উন্নতিতে প্রীত হই, প্রবাস থেকে সময়ের ব্যবধানে দেশে ফিরলে এই উন্নতিটা চোখে পরে। এই ফেব্রুয়ারিতে পেশাগত কাজে ঢাকায় এসে বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি দর্শন আর এর ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে বৈঠকে ভাল লেগেছে আন্তর্জাতিক মান দেখে। বাংলাদেশে নামকরা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সিনিয়র অফিসারদের বেতন ভাতা আর সুবিধে উন্নত বিশ্বের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্যেও আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে ওষুধ আর চিকিৎসা খাতে বাহ্যত এত অর্জনের মাঝে হঠাৎ করেই করোনা এসে আমাদের সরকারী সক্ষমতার আসল চিত্রকে উদোম করে দিল। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ওষুধ রপ্তানীকারক, অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) উৎপাদনে তেমন কোন শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়নি, অথচ এটি ওষুধ উৎপাদনের সাইড ব্যবসা হতে পারতো।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯ এর টেস্টিং আর ডাটা ব্যবস্থাপনা সহ অন্যান্য দায়িত্বে নিয়োজিত। SARS CoV-2 ডিটেকশনের যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অর্থাৎ IEDCR এর নিজস্ব ব্যবস্থা ছাড়াও ডিটেকশনে দেশের আর কোথায় কি আছে উনাদের ধারণা থাকার কথা। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট, মেডিক্যাল কলেজ, এমন কি ওষুধ কোম্পানিগুলোতে খোঁজ নিলে প্রথম থেকেই আরটিপিসিআর মেশিনের খোঁজ পাওয়া যেত, একটু ঘষা-মাঝা করে ল্যাবগুলোকে এনালাইসিসের উপযোগী হয়তো করা যেত। একেকটি মেশিনে প্রতিদিন অসংখ্য টেস্ট করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর টেলি কনফারেন্সের পর দেখা গেল অনেক প্রতিষ্ঠান আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠল, এখন দেখছি এখানে ওখানে টেস্টের ব্যবস্থা হচ্ছে। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি’র মত বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে, এদের কাজে লাগাতে দ্বিধা বা বিলম্ব কেন? এটি কি জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের অদক্ষতা? সত্য মিথ্যা জানিনা, অভিযোগ আছে টেস্টিং আর ডাটা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের রেডট্যাপে পরীক্ষা করার বিকেন্দ্রীকরণে অনীহা ছিল। যত বেশী টেস্ট তত বেশী ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনা। বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির নগ্ন উল্লাসে তছনছ হয়ে যাচ্ছে জনপদ, লাগাম টেনে ধরতে টেস্ট টেস্ট টেস্টের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় লকডাউন এমনকি সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বে জনগণকে অভ্যস্ত করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমরা এটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। করোনা বিষয়ে পুরো দেশ, জাতি অবহিত, তারপরেও জনগণের উদাসীনতা ঝুঁকিটাকে কমতে দিচ্ছে কই? পুলিশ, প্রশাসন আর সেনাবাহিনীর সাহায্যে যে কোন মূল্যে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ঝড় আসলে আমরা দোকান বা ঘর বন্ধ করতে কারো নির্দেশের অপেক্ষায় থাকিনা, নিজ থেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। জাপানি এক বিশেষজ্ঞের ভাষায় করোনা উদ্ভূত কোভিড-১৯, ঝড়ের মত, নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবুঝ জনগণকে বাধ্য করতে হবে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সমসাময়িক প্রেক্ষিত নিয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশাল একটি অংশকে অনেক বেশী পেশাদার মনে হয়। পুলিশের দায়িত্বে “স্ট্রিট স্মার্ট” শব্দটি অনেক বেশী কাঙ্ক্ষিত আর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে “স্ট্রিট স্মার্ট” অফিসারের সংখ্যা আশা জাগায় বটে যাদের অনেককেই ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান ছাড়া এই ঝড় সামলানো যাবে না।

ধর্ম উপমহাদেশে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে বরাবরই স্পর্শকাতর সেক্টর। জুম্মার নামাজ বলুন, আর পুণ্য স্নান বলুন, দেশ ও জাতির স্বার্থে জননিরাপত্তায় সরকারের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করাই মানবতা; কারো জীবন রক্ষা করা যেন মানবতাকেই রক্ষা করা। মেধাবী বলে পরিচিত ইহুদিদের মধ্যেও ধর্মে নিবেদিত থাকতে গিয়ে সরকারি লক ডাউন পালনে অনীহা এবং আইন মানাতে পুলিশ কর্তৃক বল প্রয়োগের ঘটনাও ঘটছে। আপনার ধর্ম পালন যদি অন্যের জীবনহানির কারণ হয়, অন্যকে অসুস্থ বানিয়ে সংসারে দুর্ভোগ/অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা হয়, সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় সেটি পছন্দ করবে না।

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ডাটা থেকে জানা যায় করোনা আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণে যেতে হয় ৫ জনের এবং ফুস্ফুসের অকার্যকারিতায় এদের জন্যে প্রয়োজন হয় কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার ভেন্টিলেটর। বাংলাদেশে ভেন্টিলেটরের সংকটের কারণে নিবিড় পর্যবেক্ষণের রোগীদের টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভেন্টিলেটরে সংকট বিশ্বব্যাপী, অনেক দেশের লাখ লাখ ভেন্টিলেটর থাকার পরও তাঁরা আতংকিত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কিনা সংশয়ে। ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালে ৫০০ এর মত এবং বেসরকারী হাসপাতালে ৮০০ এর মত, ফলে পরিস্থিতির অবনতি হলে সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ভিআইপি সংস্কৃতি নির্ভর একটি দেশে ভিআইপি’র সংখ্যা তো ভেন্টিলেটরের চেয়ে বেশী, ফলে সাধারণদের নিয়তি মেনে না নিয়ে কি করার আছে?

করোনার আক্রমণের পরিণতি কি হতে পারে বিভিন্ন দেশ পরিসংখ্যান ভিত্তিক মডেলিং এর মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে কতটুকু লাভ হচ্ছে, শিথিলতায় কতটুকু ক্ষতি হতে পারে, লক ডাউনের আরো কঠোরতায় কতগুলো প্রাণ বাঁচানো যাবে সবকিছুরই হিসেব নিকেশ করা হচ্ছে। মডেলিং এর আভাস বাস্তবতার কতটুকু কাছাকাছি, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে এতে সরকারের কর্ম পরিকল্পনায়, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় সুবিধে হয়। বাংলাদেশে সক্ষমতার অভাবের পাশাপাশি জনগণের কথা না শুনার সংস্কৃতির মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের প্রচেষ্টাকে আরো দুরূহ করে তুলে।

কোভিড-১৯ এর জন্যে দায়ী SARS CoV-2 নামক করোনা ভাইরাসটির বিস্তারে তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার প্রার্থিত, কাঙ্ক্ষিত অনুকূল প্রভাবের হাইপোথিসিসটি ভারতীয় উপমহাদেশের জন্যে কোন সুখবর বয়ে আনবে কিনা, এর পরিষ্কার চিত্রটির জন্যে মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পজিটিভ প্রভাবের অর্থ হচ্ছে বিস্তারের গতি ধীর হওয়া, একেবারে বন্ধ হওয়া নয়। তাপমাত্রা আর আর্দ্রতায় বিস্তারের গতি কমে গিয়ে যে সুবিধে দিবে, আমাদের অসচেতনতা সেই সুবিধেকে কাজে লাগাতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়ে যায়। সরকার ছুটি দিলে আমরা যেভাবে যানবাহনে উপচে পড়া ভিড়ে ছুটতে থাকি তা বিপর্যয়কে আহবান করার মত। সেনা আর পুলিশ টহলে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সম্প্রতি গার্মেন্টস খুলা দেবার সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তহীনতাজনিত জন চলাচল পরিস্থিতিকে নিঃসন্দেহে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। গার্মেন্টস শিল্প আমাদের অর্থনীতির প্রাণ, কিন্তু এটি চালু রাখতে গিয়ে কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হলে ফ্যাক্টরিটি অবশেষে বন্ধ করার চাইতে কিছু দিন বন্ধ রেখে পরিস্থিতির উন্নতির সার্বিক সুযোগ দেওয়াটাই বোধহয় বেশী যৌক্তিক।

বিসিজি টিকার হাইপোথিসিস আরেকটি আশা জাগায় এই উপমহাদেশের মানুষদের জন্যে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া অনেক বাংলাদেশিদের হয়তো এই টিকা দেওয়া ছিল। তাহলে যারা অনেক বছর হল টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এন্টিবডি কি এখন আর কার্যকর নয়? বিসিজি টিকার হাইপোথিসিস সত্য হলেও খুব সহসা সমাধান মিলবে বলে মনে হয় না।

করোনা যুদ্ধে শারিরিক সুস্থতা আমদের আপাতত একান্ত কাম্য তবে এর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব হবে দীর্ঘ মেয়াদী। এরকম অনেক রকম হিসেব নিকেশের দোলাচলে দুলছে আমাদের বাংলাদেশের ভাল থাকা। আমাদের অর্থনীতির ফুস্ফুসদ্বয় রেমিট্যান্স আর গার্মেন্টস কোন ভেন্টিলেটরে সাহায্য ছাড়াই চলতে থাকুক এমনি এক আকুতিতে আমাদের হৃদয় নিংড়ানো প্রার্থনা “ভাল থেকো বাংলাদেশ”।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়