সাদিয়া নাসরিন : মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন এটা সত্য হলেও হতে পারে। তিনি যা করছেন তার একার সিদ্ধান্তে নয়। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ বা ইনস্ট্রাকশন বা সরকারের স্ট্র্যাটেজি ফলো করছেন। এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। কেন নেই সেটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স পড়তে হয় না। এখন আপনারা তার পেশাগত আচরণের সমালোচনা করতেই পারেন। সেই সূত্র ধরে রাষ্ট্রকেও জবাবদিহিতার জায়গায় আনতে পারেন। কিন্তু এখানে তিনি ‘পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতিভূ’ কেমনে হলো আমারে কেউ একটু বুঝিয়ে বলবেন? তিনি কি এমন কোনো কাজ করছেন বা নীতি বা নিচ্ছেন বা এমন কোনো ক্ষমতাচর্চা করছেন যা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়েছেন? এমন কি হয়েছে যে তিনি পুরুষদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, নারীদের দেননি? পুরুষদের টেস্ট করছেন, নারীদের করেননি? বা এ রকম কিছু? বরং তিনি নিজেও কি নারী হিসেবে সেক্সিস্ট আক্রমণের শিকার হননি? তিনি নিজেও কি পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসনের তোপে পড়েননি? কোনো প্রসঙ্গ ছাড়া কারও ব্যক্তিগত স্ট্যান্ড কী সেটা না জেনেই তাকে পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ বানিয়ে দিলে সেটাও তো নারীবাদী কার্ড খেলাই হয়। হ্যাঁ তিনি ধাম করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিপ্লব করে ফেলেননি কেন, এই প্রশ্ন তুলে আপনি তার ‘গাটস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন আপনারা। তবে তার আগে একটু নিজের দিকে তাকান। এই যে আমরা, আপনারা নারীবাদ গুলিয়ে তিনবেলা পানি খাওয়া দিকগজেরাও কী অনেক ক্রুসিয়াল মোমেন্টে, এমনকি নারীর ইস্যুতেও পেশাগত দায়বদ্ধতা বা চাপের কারণে বা প্রয়োজনের কারণে নিজের নীতি আদর্শের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করি না? বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, নীতিগত কারণে এককথায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো ‘গাটস’ আমাদের সবার সবসময় থাকে কিনা? আমি নিজে অন্তত ‘মহান নারীবাদীকে দেখসি চাকরির জন্য বসের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত মাইনা নিতে। অবশ্য যারা চাকরি বাকরি না করে বিপ্লব করেন তাদের জন্য এই প্রশ্ন প্রযোজ্য নয়। তারা মীরজাদীর শাড়ি গুনতে থাকেন। আর শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে পুরুষতন্ত্র খুঁজতে থাকেন। তবে খেয়াল রাখুন যেটারে ‘পুরুষতন্ত্র’ বলছেন আপনারা, সেই চলমান সিস্টেমের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ কিন্তু বেগম রোকেয়াকেও করতে হয়েছিলো। তাতে তার নারীমুক্তির কাজ আটকায়নি। স্যরি টু সে, এই প্রথম আমার মনে হয়েছে কোনটা নারীবাদ আর কোনটা ‘রোগ’ সেটা একটু বোঝার সময় হয়েছে আমাদের। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :