ইসমাঈল আযহার: [২] ইসলামে সাদকায়ে জারিয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুনাহে জারিয়া আছে। গুনাহে জারিয়া হলো, এমন গোনাহ যেটা ব্যক্তির পাপের খাতায় লাগাতার বৃদ্ধি হতে থাকে।
[৩] কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহর আয়াত সমুহকে অমান্য করে, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এরাই তারা যাদের সমুদয় আমল নিস্ফল হবে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। ( আলে ইমরান ৩/৩২-২২)
[৪] পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। ( সূরা আহজাব)
[৫] রাসূল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে ব্যক্তি যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের সম্মান করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে সে যেনো ভালো কথা বলে নইলে চুপ থাকে। (মুসলিম শরীফ)
[৬] একজন প্রকৃত ইমানদার কখনো কাউকে কষ্ট দিতে পারেন না। হাদিসের পরিভাষায় ‘সেই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে ওপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বোখারি: ১০,আহমদ)
[৭] একদিন মহানবী (স.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন হতে পারে না। এভাবে তিনি ৩ বার বললেন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (স.) সে ব্যাক্তি কে? রাসূল (স.) প্রতিউত্তরে বললেন, যার অনিষ্টতা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (বোখারি মুসলিম:৪৬ আহমদ:২৮৮)
[৮] হাদিসে এসছে ‘এক সাহাবি রাসূল (স.) কে এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, -অমুক মহিলা বেশি বেশি নামাজ রোজা এবং দান-সদকা করে কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে তিরস্কার করে এবং কষ্ট দেয়। রাসূল (সা:) বললেন, এমন মহিলা জাহান্নামে যাবে। লোকটা আবার বললেন, অমুক মহিলা নামাজ, রোজা এবং দান-সদকা কম করে, তবে সে তার প্রতিবেশীকে গালিগালাজ করে না এবং কষ্ট দেয় না। রাসূল (সা:) বললেন, সে মহিলা জান্নাতে যাবে। (মুনাদে আহমদ: ২/৪৪০: মুসদারাক হাকেম: ৪/১৬৬) এখানে মহিলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও ইসলামে এটি নারী পুরুষ সবার জন্য প্রয়োজ্য।
[৯] পরিবেশ দূষিত হলে রোগব্যধি ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
[১০] পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে দূষণমুক্ত করো এবং পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখো।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈমানের ৭২টি শাখা। তার মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর সর্বনিম্ন হচ্ছে রাস্তাঘাট থেকে ক্ষতিকারক জিনিস দূর করা।’ শুধু তাই নয়, মানুষের দেহ-মনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও মহানবী (সা) দিকনিদের্শনা দিয়ে গেছেন। সে ক্ষেত্রে বায়ু দূষণের হাত হতে দেহের ভেতরকে রক্ষা করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
[১১] মোট কথা মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। কাউকে কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা ইসলাম চরম শত্রুর সাথেও অবস্থাবুঝে মোহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার উৎসাহ জুগিয়েছে। আবু লাহাবের স্ত্রী মহানবী (স.) যে পথ দিয়ে চলাচল করতেন সে পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো অথচ তার অসুস্থতার সময় মহানবী (স.) তার সেবা করেছিলেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যেনো কারও কষ্ট না দিই এবং কষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়াই, মহান আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
আপনার মতামত লিখুন :