সুব্রত বিশ্বাস : মনুষ্যসমাজে বরাবর স্বার্থপরতার দিকে পাল্লা ঝুঁকতে চায়, সংকটকালে স্বার্থরক্ষার তাড়না প্রায়শ নগ্নরূপে প্রকাশ পায়। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। করোনাভাইরাসজনিত অচলাবস্থার কারণে বহু মানুষের অসুস্থতা ও মৃত্যু ঘটছে। আরও ঘটবে। অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক মন্দা... সমাজে কতো গভীর ক্ষত তৈরি করবে, কতো মানুষ কর্মহীন, খাদ্যহীন হবে, কে বলতে পারে? এমন অনিশ্চিত, ভীতিপূর্ণ ভবিষ্যতের সম্মুখীন হলে মানুষের মধ্যে আত্মরক্ষার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠে। তা অপর সব বিবেচনাকে আচ্ছাদিত করে দিতে চায়। আমেরিকা, ইউরোপ হতে এশিয়ার নানা দেশে দোকান বাজার প্রায় লুণ্ঠিত হচ্ছে এই কারণেই। এরই মধ্যে কিছু মানুষ যে অপরের প্রয়োজন মনে রেখে, নিজের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে ত্রাণ ও সহায়তার নানা উদ্যোগ করছেন, তা গোটা সমাজকেই আশ্বস্ত করছে। যখন বাইরের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, তখনই চাইতে হবে আত্মশক্তির দিকে।
পারস্পরিক আস্থা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টাই মানুষের শক্তি। বহু যুগ পূর্বে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুণী সবার ঘর হতে মুষ্টিভিক্ষা করে দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা মেটাবার পথ দেখাচ্ছে। সেই পথ বাহিয়াই বারংবার দেখছে, মহামারীতে পীড়িত, দুর্যোগে সর্বস্বান্ত, যুদ্ধ-দাঙ্গায় বিপর্যস্তদের জন্য শুশ্রƒষা ধনীর গৃহ হতে আসেনি। আসছে সাধারণ গৃহস্থের হাত ধরে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দল বা সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলো সক্রিয় হওয়ার পূর্বেই বহু নাগরিক পরস্পর সমন্বয় করে সহায়তার কর্মকা- শুরু করছেন। বহু ক্ষেত্রে তারাই আর্তদের অবস্থান ও প্রয়োজনের প্রতি সরকারি নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এমন নাগরিক সক্রিয়তার একটি ধারা বারংবার জনজীবনকে সঞ্জীবিত করছে। বিধ্বংসী বন্যা, মর্মান্তিক হত্যাকা- এবং এখন মহামারীজনিত অচলাবস্থা, প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্ত, গৃহহীন, সর্বস্বান্ত মানুষদের জন্য যারা অগ্রণী হচ্ছেন তারা ধনকুবের শিল্পপতি কিংবা ক্ষমতাদর্পী নেতার বদান্যতার অপেক্ষা করেননি। সম্মিলিত শক্তিই তাদের বল, মুষ্টিভিক্ষাই তাদের সম্পদ। অতল অনিশ্চয়তার মুখে দেশবাসীর যদি কোনো ভরসা থাকে, তবে তা ‘সম্মিলিত শক্তিই’ মন্ত্র। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :