সুমন্ত আসলাম : দুটো জিনিস আনার জন্য বাইরে এসেছি, বাসার কাছেই। বনলতা সুইটসের মোড়ে এক রিকশাওয়ালা তার মাস্কটা একবার মুখ থেকে নিচে নামাচ্ছেন, একটু পর আবার মুখে লাগাচ্ছেন। যথারীতি দূরত্ব রেখে বললাম, ‘সমস্যা কী’? ‘দম আটকে আসে’। বিগলিত হাসি দিলেন তিনি। ‘রিকশা চালানোও তো কঠিন কাজ। দম আটকে আসে’। (ছোটবেলায় কয়েকবার রিকশা চালানোর চেষ্টা করেছি। রিকশার হ্যান্ডেল বারবার একদিকে ঘুরে যায়। সোজা রাখতে পারিনি কিছুতেই। কঠিন কাজ)। ‘অভ্যাস হয়ে গেছে। পরথম পরথম বুকের ভেতর দাইপরাতো’। ‘দু-চারদিন রিকশা না বের করলে হয় না’? ‘হয়। কিন্তু মানুষজনের তো অসুবিধা’। ‘কীসের অসুবিধা’? ‘কিছুক্ষণ আগে এক বুড়া মানুষের পেটে ব্যাদনা। হাসপাতালে যাইবো। হাসপাতাল আবার মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে। গাড়ি-ঘোড়া নাই। তার মাইয়াসহ তারে পৌঁছায়া দিলাম’। তৃপ্তির একটা হাসি দিলো মানুষটি, ‘এ রকম নানা অসুবিধা। এই যে...’। সিটের নিচ থেকে পলিথিনে রাখা দুটো মাস্ক বের করলেন মানুষটা, ‘তিন জায়গা থাইক্যা তিনটা পাইছিলাম। কিন্তু আমার তো আছে। একটা একজনরে দিছি। খুঁজতাছি কার চোপায় (মুখে) এইড্যা নেই, তারে আরেকটা দিমু। তারপর আর কয়ডা কামাই কইর্যা ডেরায় ফিরমু’। মানুষটার মুখের দিকে তাকালাম। অবিকল দেবদূতের মতো চেহারা, মুখে মাস্ক পরা দেবদূত। আমাদের এই যন্ত্রের শহরে এখনো অনেক দেবদূত। না হলে এই পাপময় সময়ে বেঁচে আছি আমরা কীভাবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :