ইসমাঈল আযহার : [২] কোরআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে জীবনের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়। কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আমরা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের জীবনটাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিই। আর কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি যোগায়।
[৩] আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষা নেবেনই। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরবিতে দুই বার জোর দিয়ে এ কথা বলেছেন। কারো বেলায় সেই পরীক্ষা হয়তো চাকরি হারিয়ে ফেলে অভাবে, কষ্টে জীবন পার করা। কারো বেলায় হয়তো বাবা-মা, স্বামী, স্ত্রী, সন্তানদের জটিল অসুখের চিকিৎসায় দিনরাত সংগ্রাম করা।
[৪] কারো বেলায় হয়তো নিজেরই নানা ধরনের জটিল অসুখ। কারো বেলায় আবার জমি-জমা, সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সাথে শত্রুতা, শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার, দুশ্চরিত্র স্বামী, পরপুরুষে আসক্ত স্ত্রী, ড্রাগে আসক্ত ছেলে, পরিবারের মুখে কালিমা লেপে দেওয়া মেয়ে —কোনো না কোনো সমস্যায় আমরা পড়বোই। এই সমস্যাগুলো হচ্ছে আমাদের জন্য পরীক্ষা।
[৫] আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের নানাভাবে পরীক্ষা করেন। এই প্রসঙ্গে কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি অবশ্যই ভয়-বিপদ, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি এবং আয় কমিয়ে দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবো। এসব অবস্থায় যারা সবর করে, তাদেরকে সুখবর দাও, যারা বিপদে পড়লে বলে যে, “আমরা আল্লাহর-ই এবং আল্লাহর কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।’
[৬] তাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে বড়ই মেহেরবাণী হবে এবং তার রহমত তাদের উপর ছায়া দেবে। আর এ রকম লোকেরাই সঠিক পথে চলছে।’(বাক্বারা ১৫৫-১৫৭)।
[৭] কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে জানা যায়, ঈমানদারগণ বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে পারেন। ভয়-ভীতিকর অবস্থা ঈমানদার বান্দারা কখনও কখনও ভীতিকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হন। কিংবা পরিকল্পিত উপায়ে তাদের সামনে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়; নানা উপায়ে ভয় ভীতি ছড়ানো হয়। এরফলে দুর্বলচেতা ঈমানদারগণ নিজেদেরকে ঈমানদার হিসাবে পরিচয় দেয়ার হিম্মত পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।
[৮] দুনিয়ার কোন শক্তিকে ভয় করে আদর্শ ত্যাগ করেনা। চতুর্মুখী বাধা আসলেও কখনও সাহস হারায়না বরং সর্বাবস্থায় দ্বীনের উপর অবিচল থাকেন। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, “তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনাবাহিনী একত্র হয়েছে, তাই তাদেরকে ভয় করো,’ একথা শুনে তাদের ঈমান বেড়ে গেলো এবং তারা বললেন, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতোই না ভালো কাজ সমাধাকারী’ ।
[৯] আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যাতে তোমাদের অবস্থা যাছাই করে নিতে পারি এবং দেখে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা চেষ্টা করে এবং কে ধৈর্যশীল। (সুরা মুহাম্মদ- ৩১)
[১০]আল্লাহ পাক কুরআনে এই কথা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন যে ঈমানের ঘোষণা দিলে পরীক্ষা আসবেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘লোকেরা কি মনে করে রেখেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে আর পরীক্ষা করা হবেনা? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তী সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী। আর যারা খারাপ কাজ করছে তারা কি মনে করে বসে আছে তারা আমার থেকে এগিয়ে চলে যাবে? বড়ই ভূল সিদ্বান্ত তারা করেছে। যে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার আশা করে (তারা জানা উচিত) আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসবেই। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন। যে ব্যক্তি প্রচেষ্টা সংগ্রাম করবে সে নিজের ভালর জন্যই করবে। আল্লাহ অবশ্যই বিশ্ববাসীদের প্রতি মুখাপক্ষেীতাহীন। আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তাদের খারাপ কাজগুলো আমি তাদের থেকে দূর করে দিব এবং তাদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজগুলোর প্রতিদান দেবো- (আনকাবুত ১-৭)
আপনার মতামত লিখুন :