আমজাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: [২] লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে মেঘনার ভাঙনে জর্জরিত। শীত কি বর্ষা! কোন মৌসুমই তার ভাঙন থামছে না। শীত মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন রাক্ষুসে মেঘনা। যেখানে বর্ষা মৌসুমে পানির তীব্রতায় নদী বেশি ভাঙে। সেখানেই শীতেই ভাঙছে বর্ষার মতই। শীত শেষ, শুরু বর্ষা মৌসুম। এখন উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের চোখে হতাশার চাপ। কখন জানি কার বাড়ি, আবাস ভূমি, ফসলি জমি রাক্ষুসে মেঘনার পেটে চলে যায়।
[৩] এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলা দুটি মাত্র ৩-৪ বছরের মধ্যে বিলিন হবে। কিছু বস্তা ডাম্পিংকাজ চলে। তবে সেটা দিয়ে এত বড়, দ্রুত গতি সম্পূর্ণ ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না। তাই বড় বাজেট পাশ করে দ্রুত ভাঙনের কাজ ধরতে হবে।
[৪] সারা বিশ্ব আজ মহামারী করোনা ভাইরাসে আতঙ্কে দিন পার করছে। বাংলাদেশেও হানা দিতে শুরু করেছে। যেখানে জাতি করোনায় আতংকিত । সেখানে রামগতি-কমলনগরের মেঘনার উপকূলীয় অঞ্চলে জনগন মেঘনায় ভিটে মাটি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত।
[৫] জনপ্রতিনিধি, সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভাঙন রোধে কাজ হচ্ছে না। মাঝে মাঝে শোনা যায়, ভাঙন রোধে বাজেট পাশ হচ্ছে, হয়েছে। জনগন সে আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু কিছু দিন পর বাজেট তো দুরের কথা শোনা যায় কিছুই হয়নি। এভাবেই চলছে পুতুল খেলা। এ অঞ্চলেরর জনগন হতাশ, হতভম্ব, দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
[৬] ভাঙনে অতিষ্ঠ হয়ে উপকূলবাসীর মনে এখন নানা প্রশ্ন। ভাঙন কবে থামবে, কবে মেঘনা তীরের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে, কত ভাঙনে মেঘনার পেট ভরবে? এলাকাবাসী মনে করেন, মেঘনার ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন টেকসই নদী তীর রক্ষা বাঁধ।
[৭] গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেঘনার ভাঙনে প্রায় বিশ কিলোমিটার উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনি, লুধুয়া, পাটারিরহাট, সাহেবের হাট, রামগতির চর আবদুল্লাহ, চর আলেকজান্ডারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙন কবলিত। এভাবে ভাঙন চলমান থাকলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে রামগতি-কমলনগরের বেশির ভাগ জনপদ।
[৮] স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দীর্ঘ বছরে নদীর ভাঙনে ৩১টি বড় হাট-বাজার, ৩৫ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার, ৫২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৪০০ কিলেমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার একর ফসলি জমি ও ৪৫ হাজার বাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
[৯] লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় ‘অনেক আগেই প্রথম পর্যায়ে ভাঙনের তুলনায় সামান্য কাজ হয়েছে। ২০১৪ সালে রামগতি ৪ কিমিঃ এবং কমলনগর ১ কি: মি: কাজ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য কাজও শুরু করা যায়নি। ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।’সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :