নাজমুল হুদা : [২] নিত্যদিনের পরিচিত পরিবেশটা আজকে বেশ অপরিচিত। কিছুই চেনা যাচ্ছে না। নেই কোনো হৈচৈ কিংবা কোলাহল। মনে হচ্ছে জনমানুষ শূন্য ভূতুড়ে পরিবেশ এটি। খসখসে শ্যাওলামাখা দেয়ালগুলো ঠিক আছে। দেয়ালের ভিতর থেকে কোনো শব্দ নেই। দিনের বেলায় চলছে না ফ্যান। রাতেও জ্বলছে না ভেতরের লাইটগুলো। লাইট জ্বালানোর মানুষগুলোও নেই। বাইরে থেকে তালা লাগানো মূল ফটক। তবে ভবনের আশেপাশে আছে চিরচেনা সেই গাছ আর দক্ষিণের হালকা বাতাস। বলছিলাম সরকারি তিতুমীর কলেজের হলের কথা। করোনাভাইরাসের কারণে এমন থমথমে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে এখানে।
[৪] এদিকে, বিশ্বব্যাপীই দিনকে দিন বাড়ছে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজও বন্ধ হয়েছে গেল ১৭ মার্চ থেকে। সেই সঙ্গে, শুক্রবার থেকে পুরো দমে বন্ধ আছে কলেজটির আবাসিক ছাত্রাবাস।
[৫] ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ছাত্রবাস গুলি বন্ধের নির্দেশনা আসে গত বৃহস্পতিবার। সেই নির্দেশনায় সরকারি তিতুমীর কলেজের তিন ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে হঠাৎ করে এমন বন্ধের ঘোষনা আসে। হল গুলো এখন পুরো শিক্ষার্থী শূণ্য, যেখানে এখন অনেকটা ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
[৬] খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে হল গুলো এমন পরিবেশ কেউই দেখে নি। ইদ কিংবা পূজার ছুটিতেও একেবারে মানবশূণ্য হয়নি হল গুলো। ওই ছুটি গুলোতেও কিছু শিক্ষার্থী থেকে যেত হলে। কিন্তু এইবার করোনাভাইরাসের কারণে কড়া নির্দেশনা আছে। নিজেদের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট সবাই হল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
[৭] তিতুমীর কলেজের একমাত্র ছাত্র হোস্টেল আক্কাসুর রহমান আঁখি হল। আর মেয়েদের জন্য বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাস ও সিরাজউদ্দীন ছাত্রীনিবাস। এর সবকটি হলের মূল ফটকে ঝুলছে তালা। নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মীও। অবৈধ ভাবে হলে কেও অবস্থান করছে কিনা তা দেখার জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে হলগুলোয়।
[৭] এই ব্যাপারে আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, হলে থাকা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেকে একসঙ্গে থাকার ফলে সহজে একজন থেকে আরেক জন আক্রান্ত হতে পারে। তাই কৃর্তপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী।
[৮] বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থী লাকি মজুমদার বলেন, হল বন্ধের সিদ্ধান্তে আমি এবং আমার বন্ধুবান্ধব সুরক্ষায় থাকবো। কলেজে একত্রে অনেক শিক্ষার্থীদের থাকতে যা করোনাভাইরাস আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয় আমাদের কাছে।
[৯] এছাড়াও, সিরাজউদ্দিন হলের ছাত্রী তামান্না বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট আসনের বিপরীতে ছাত্রী বেশি হওয়ায় এক রুমে অনেক জন করে থাকতে হয়। ফলে সহজে এক জন থেকে অন্য জন আক্রান্ত হতে পারে। হল বন্ধের ফলে সেই আশঙ্কা আর থাকছে না।
[১০] সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আশরাফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ সরকারি তিতুমীর কলেজ। প্রতিদিন ক্লাস করতে অনেক শিক্ষার্থীর আগমন ঘটে ক্যাম্পাসে। যার ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রামনের আশঙ্কা বেশি। তাই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কলেজ প্রশাসন ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিতুমীর কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, কলেজের হল গুলো বন্ধ দেয়া হয়েছে।
[১১] এদিকে, শিক্ষার্থীদের অযথা বাহিরে না যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন কলেজটির অধ্যক্ষ। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ