চিররঞ্জন সরকার: মানুষের সব অহংকার, সব বড়াই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, সভ্যতা এগোলেও মানুষের আদিম অসহায়ত্ব এখনো ঘোচেনি। একটা অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে উন্নয়ন-অগ্রগতি, মহাকাশ গবেষণা, যুদ্ধবিমান, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অর্থবিত্ত-ক্ষমতা কতোটা অসার। মিথ্যা অহংকারে ঠাসা একটা কৃত্রিম জীবন আমরা যাপন করছি। পুরোটাই ম্যাকানিকাল। কোথাও প্রাণের ছোঁয়া নেই। এই অভ্যস্ত জীবন আমাদের এতোটাই দেউলিয়া বানিয়েছে যে, আমরা এখন সময় কাটাতেও পারি না। রুটিনের বাইরে গিয়ে বাঁচার উপায় যেন ভুলে গেছি। করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করতে গিয়ে এখন উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা সবাই ‘গৃহবন্দি’ হয়ে যাচ্ছে এবং ক্রমশই প্রকাশ পাচ্ছে, নিজের বাড়িতে এ সব ‘আধুনিক’ মানুষের কিছুই করার নেই। সিনেমা হল বন্ধ, শপিংমল বন্ধ। টিভি খুললে খেলা নেই। সিরিয়ালও রিপিট শুরু করলো বলে। কারণ শুটিংও তো বন্ধ। তাহলে লোকে করে কী? সবাই তো আর নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, এগুলোয় অন্তরঙ্গ (ফ্যামিলিয়ার) হতে পারেনি। টিভিতে যে খবর দেখবো, তারও উপায় নেই, কারণ তাতে সারাক্ষণ করোনা নিয়ে এতো আলোচনা চলছে, কিছুক্ষণ পরই মাথা ঝিমঝিম করে। এসব শুনলে মনে হতে বাধ্য যে, আমার মধ্যে সবক’টা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস আক্রমণের। ফেসবুকেও শুধু এই এক ভাইরাস নিয়ে একঘেঁয়ে সব আলোচনা, উদ্বেগ হতাশা, প্যাঁচাল।
বাকি রইলো বই পড়া। কিন্তু সে অভ্যাস বহুদিন আগেই যে চলে গেছে। একটা বড়সড় উপন্যাস খুলে বসলেই মাথা ঝিমঝিম করে। শেষে কী তাহলে বাড়ির লোকের সঙ্গে মানে স্ত্রী, সন্তান, ‘কাজের লোক’, তাদের সঙ্গে গল্পগুজব করে দিন কাটাতে হবে? তাদের সঙ্গে বড়জোর কিছু ‘প্রয়োজনের’ কথা চলতে পারে, দু-চারটা কাটা কাটা বাক্য বলে, মেজাজ দেখিয়ে গটগট করে অফিস চলে যাওয়া যায়। তারা কথা বলতে এলেই ‘কাজ আছে’ বলে খেঁকিয়ে উঠা যায়। কিন্তু সত্যি সত্যি বসে গল্প, আড্ডা, মজা করা? পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন, নতুন দিনের পরিকল্পনা? আমরা কি সত্যিই তা শিখেছি? গত কয়েক দশকে অলক্ষ্যে আমরা সবাই যে একেকজন ‘মহান’ অসামাজিক জীবে পরিণত হয়েছি। হায়! করোনাভাইরাস আমাদের নতুন করে জীবনযাপন করতে শেখাচ্ছে। জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবাচ্ছে। যেসব চাকরিজীবী করোনাভাইরাসের কারণে ‘ঘরে বসে অফিস’ করছে, তাদের জন্য এ এক নতুন বিপন্নতা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :