সৌরভ ঘোষ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : [২] অবশেষে রহস্যজনকভাবে জামিন পেলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। [৩] রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সুজাউদ্দৌলা তার জামিন মঞ্জুর করেন।
[৪] এদিকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে আমাকে আমার বাড়ির দরজা ভেঙ্গে আমাকে প্রথমে আঘাত করে আরডিসি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর ইনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
[৫] আমি অনেক আকুঁতি-মিনতি করি এবং আমি আমার আল্লাহ্র কসম দেই। আমার সন্তানদের কসম দেই এবং আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে বার বার বলতেছিলেন যে, কলমা পড়ে নে কলমা পড়ে নে। এসময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
[৬] এরপর কোনো এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আমাকে আবারও ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে কোনো রকম হাত দিয়ে চোখের বাঁধন আলগা করে দেখি যে আমি ডিসি অফিসে। এরপর আমাকে আবার শক্তকরে চোখ বেঁধে আমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে আরডিসি’র নেতৃত্বে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়। আরডিসি নিজেই আমাকে মার দিয়েছেন। আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এরপর আমার কাছ থেকে ৪টি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে চোখ বাঁধা অবস্থায়। কিসের স্বাক্ষর নিয়েছে সেটা আমি এখন পর্যন্ত জানি না। এরপর তাড়াহুড়া করে তারা আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে রয়েছে।
[৭] জামিনের আবেদন করেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা হয়েছে সব আমার অমতে হয়েছে।
[৮] উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার শহরের চড়–য়া পাড়ার বাড়িতে যায়। একপর্যায়ে জোড় পুর্বক দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী সন্তানের সামনেই তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে আসে। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে এসে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারনের পর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে ১ বছরের কারাদন্ড দেয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
[৯] আরিফুলের বড় বোন শিক্ষিকা রিজিকা বেগম জানান, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের কোন আবেদন করা হয়নি। তারা আমার ভাইকে মারার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। সাংবাদিকদের তৎপরতায় তা পারেনি। আমি আমার ভাইয়ের উপর নির্যাতনের বিচার চাই। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :