শিরোনাম
◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির 

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০২০, ০৮:০০ সকাল
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২০, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] করোনার সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

আমাদের সময় : [২] এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এখনই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ অবস্থায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশেও তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে দেশে কয়েকশ মানুষকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু আর করোনার প্রাদুর্ভাব একসাথে চললে পরিস্থিতি হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ কম হতে পারে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে গত বছরের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অবশ্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেঙ্গু ছড়ানোর বাহক এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসকরণ, চিকিৎসাসংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট মজুদসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হেিত নিয়েছে সরকার।

[৩] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক রোগতত্ত্ববিদ বলেছেন, গেল বছর ব্যাপক হারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় মোকাবিলার ক্ষেত্রে বেশকিছু দুর্বলতা ছিল। যেমন আগে থেকে মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে মশা নিধন না করা, ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত পরিমাণ কিট মজুদ না থাকা, আক্রান্তদের দেরিতে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানে অপ্রতুলতা। এ বছর অবশ্য আরেকটা বিপদ আছে। যদি করোনার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তা হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।

[৪] জানা গেছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু দেখা দেয় ২০০০ সালে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালে। বিগত বছরগুলোয় ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গেল বছর দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সামান্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছুটে যেতেন হাসপাতালে। হঠাৎ ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কিটের প্রচ- সংকট দেখা দেয়। সংকটের কারণে ১২০-১৫০ টাকার কিট বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। সুযোগ বুঝে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা ১৫০ টাকা মূল্যের একটি কিটের ব্যবহার করে ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি নিতে থাকেন ১০০০ থেকে ১৭০০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু তা করার উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে যেন ডেঙ্গু ছড়াতে না পারে সে জন্য মশারি সরবরাহসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

[৫] জানা গেছে, গত বছর প্রায় পৌনে ২ কোটি কিট আমদানির অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই পরিমাণ কিট আমদানি করেনি। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট, রিএজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমার পরীক্ষার কিট ইউরোপ, কোরিয়া ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। ইউরোপ ও কোরিয়া থেকে আনা কিটের মূল্য ৩২০-৩৫০ টাকা আর চীনা কিটের মূল্য ১৫০ টাকা। এ কারণে বেশিরভাগ কিট আমদানি হয় চীন থেকে। চলতি বছর করোনার কারণে চীন থেকে কিট আমদানির সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে বাজারের ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের মূল্য বাড়তে পারে।

[৬] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইউরোপ, কোরিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট আমদানি করা হয়ে থাকে। এটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে করা হয়। আমাদের কয়েক লাখ কিট মজুদ আছে। চীন থেকে কিট আমদানি করা না হলেও কিটের কোনো সংকট হবে না। গত বছর আমদানি করা বিপুলসংখ্যক কিট রয়েছে গেছে। ডেঙ্গু টেস্টের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেটি এখনো বিদ্যমান। কোনো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার মূল্য প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছে। আমরা বাতিল করিনি। ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য কেউ বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

[৭] অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গেল বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রোগী থেকে যেন অন্যজনের দেহে ডেঙ্গু ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য মশারি দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে মশারি কিনে দিয়েছিল। চলতি বছরও প্রয়োজন হলে হাসপাতালগুলোয় মশারি সরবরাহ করা হবে। গত বছর মশারির কোনো সংকট দেখা যায়নি। এবারও সংকট হওয়ার কথা নয়।

[৮] ডেঙ্গু ইউনিট গঠন প্রসঙ্গে সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিট করা বাস্তবসম্মত নয়। তবে যদি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়, রোগীর সংখ্যা বেশি হয় তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলতে পারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আলাদা ইউনিট গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

[৯] অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে ২০১৯ সালে অনেক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক না-ও হতে পারে। তবে চলতি বছর রোগীর সংখ্যা বেশি হলে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। কারণ প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ, মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে মশক নিধন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

[১০] প্রাপ্ত তথ্যমতে, এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বর ছড়ানোর জন্য দায়ী। এপ্রিল থেকে অক্টোবর এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু গেল বছর জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। ১ জানুয়ারি থেকে ২৬০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২২, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২, বিএসএমএমইউ ও পুলিশ হাসপাতালে ২ জন করে, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪, বিজিবি হাসপাতালে ৩, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন রয়েছেন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫৬ জনসহ রাজধানীর ১৯৮ জন রয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০, খুলনা বিভাগে ৮, বরিশাল বিভাগে ৩ ও রাজশাহী বিভাগের ১ জন রোগী রয়েছেন।

[১১] প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) জমা পড়ে।

[১২] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গেল বছর যখন ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে তখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় সব হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়। একইসঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর কিট ফ্রি সরবরাহ করা হয়। গেল বছর দেশের সবখানেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট মজুদ ছিল। এবারও আমাদের ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকট হবে না।

[১৩] ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গত বছরের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর যে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে না ছড়াতে পারে সে জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জরিপ চালানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রতিবেদন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে।

[১৪] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গেল বছর মশার বংশ বৃদ্ধি হওয়ায় এবং ওষুধ ছিটানোর পর আশানুরূপ মশা নিধন না হওয়ায় এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার ওলবাকিয়া মশা আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এডিস ভাইরাস ছড়ানোর বাহক ইজিপ্টি মশার দেহে ওলবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করিয়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। এই বিষয়টি নিয়ে আণবিক শক্তি কমিশন কাজ করছে। এটি গবেষণাবিষয়ক কার্যক্রম, তাই এটি বাস্তবায়ন হতে কয়েক বছর লাগতে পারে।

[১৫] অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০ শতাংশ এলাকা ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় অতিরিক্ত মাত্রায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৮ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের এক হাজার বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। জরিপের এই তথ্যই বলছে, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়